নিউজ ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে মাঠে নেমে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে হেফাজতে ইসলাম। শুক্রবার চট্টগ্রামে সংগঠনটির নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ফের শাপলা চত্বরে জমায়েত হওয়ার। ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালে উত্থান হওয়া হেফাজত অবশ্য দীর্ঘদিন থেকে নীরব ছিল।
যদিও তাদের দাবি অনুযায়ী, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। এ জন্য প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা সরকারের সমালোচনাও করেছেন। ইসলামপন্থি এ সংগঠনের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতিতে বলুন, সরকার পরিচালনায় বলুন সবসময়ই ছোটখাটো অনেকসময় আপস করতে হয় বৃহত্তর স্বার্থে। যেমন: এর আগে নারীনীতি নিয়ে কথা হয়েছিল তখন আমি নিজেই আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বসেছি, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি।’
‘তারপর শিক্ষানীতি নিয়ে যখন কথা হয়েছে তখন আমাদের সরকারের থেকে ক্যাবিনেটেই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে, এই নীতিমালাগুলোতে এমন কিছুই থাকবে না যেটি শরীয়াহ্ পরিপন্থি, কোরআন-হাদিসের পরিপন্থি। আসলে থাকেওনি। তার ফলে বিষয়টিকে বলতে পারি ডিফিউজ করা হয়ে গেছে, না হলে এটা একটা খারাপ রূপ ধারণ করতে পারতো। ওই সুযোগটি তো আমরা দেবো না।’
এইচটি ইমাম বলেন, ‘এই পাঠ্যপুস্তক কিংবা অন্যকোনো বিষয় নিয়ে এমন কোনো কিছু একটা সুযোগ দেবো না, যাতে যে কোনো মহলই হোক এর পক্ষে-বিপক্ষে কেউই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিতে পারে।’
আগেই গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিলো, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য ইস্যুতে উত্তাপ ছড়াতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় সতর্ক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। এরপরও গত কিছুদিন থেকে শুক্রবার কেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করে আসছে হেফাজতসহ কয়েকটি সংগঠন।
ঢাকায় অবশ্য গত শুক্রবার হেফাজতের তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। কিছুসংখ্যক কর্মী জড়ো হয়েছিলেন বায়তুল মোকাররমের ফটকে। এরই মধ্যে নাশকতার একটি পুরনো মামলায় কয়েকজন হেফাজত নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এ নিয়ে সংগঠনটির ঢাকার নেতারা চাপে রয়েছেন। তবে চট্টগ্রামে শুক্রবার বড়ধরনের শোডাউনই করেছে হেফাজত। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন। ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন হেফাজত নেতারা। এর আগে হেফাজত নেতারা একাধিকবার বিবৃতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও বড় ধরনের শোডাউন করেছে হেফাজত। হেফাজতের একটি সূত্রের দাবি, দীর্ঘসময় ধরেই সংগঠনটিতে দু’টি ধারা কাজ করছে। একটি অংশ যে কোনো উপায়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতা রক্ষা করে চলার পক্ষে। হেফাজতের আমীর আল্লামা শফীর পুত্র আনাস মাদানীর বড় প্রভাব রয়েছে এই পক্ষের ওপর। অন্যদিকে, আরেকটি অংশ বরাবরই শক্ত অবস্থানের পক্ষপাতি। এ অংশটি অবশ্য ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সংগঠনের ভেতর।
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হেফাজতে ইসলাম ব্যাপক লাইম লাইটে আসে ২০১৩ সালে। মূলত গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীত প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই সংগঠনটির আবির্ভাব ঘটে। তবে ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে যায়। এরপর থেকে দীর্ঘদিনই সংগঠনটির নীরব ছিলো।
১৩ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি