বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসলে কী হচ্ছে ?
নিউজ ডেস্ক : নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে দলের নেতাদের ওপর হামলা, এক নেতার হাতে কর্মচারী লাঞ্ছিত এবং ছাত্রদলের দুগ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় বিব্রত দলের হাইকমান্ড। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় বিএনপি কার্যালয় ঘিরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনো সরগরম হয়নি। কার্যালয়কেন্দ্রিক নেতাকর্মীদের সেই আড্ডাও দেখা যায় না। তার ওপর কার্যালয় ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি উল্লেখ করে পল্টন থানা বিএনপি নেতা মো. জসিমের আক্ষেপ, কী হচ্ছে বিএনপি অফিসে?
অবশ্য বিএনপি মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এগুলো দুর্বৃত্তদের কাজ। এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। দলের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়।
দলের মধ্য সারির কয়েকজন নেতা কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে বড় পদ পেয়ে যাচ্ছেন, আবার অনেক ত্যাগী কিছুই পাচ্ছেন না চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও চাঙ্গা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন নেতারা।
গত ১৩ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দপ্তর বিভাগে ঢুকে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আমাদের সময়ের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাছের বন্ধুরাই টিপুর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছে। হঠাৎ টিপুর সহ-দপ্তর পদ পাওয়া, গুলশান ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার এবং সাংগঠনিক পুনর্গঠন নিয়ে প্রভাব খাটানো নিয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় এবং তা মারামারিতে রূপ নেয়।
এর বাইরে বিএনপির দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দি রিজভী আহমেদের গ্রুপকে কোণঠাসা করে সেখানে অন্যদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার কারণেও দলীয় কার্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকেই।
অবশ্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অন্য খবরও চাউর আছে। ঘটনার পর টিপু সাংবাদিকদের বলেন, তার ওপর হামলা হয়েছে। পরক্ষণেই বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাকে নয়, ছাত্রদল কর্মী শাহাদাতের ওপর হামলা চালাতে এসে ভুলে তার ওপর হামলা হয়েছে। কারও কারও মতে, এ ঘটনার কয়েকদিন আগে টিপুর হাতে লাঞ্ছিত হন কার্যালয়ে দপ্তর বিভাগের কর্মচারী রেজাউল। সেই ঘটনায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন হয়। ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে টিপু নতুন ঘটনা সাজিয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কী কারণে বহিরাগতরা অফিসে ঢুকে নেতাদের মারধর করছে, তা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
এর আগে গত ১৪ জুন কার্যালয়ের ভেতরে হামলার শিকার হন বিএনপির সহ-সাংঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ। এরপর রমজানে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিল শেষে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন মৎস্যজীবী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান। এসব ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন হলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, সালাম আজাদের ওপর হামলায় অংশ নেন কারাগারে থাকা মোহাম্মদপুরের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর লোকেরা। এর পেছনে যুবদলের এক শীর্ষ নেতার সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে, যিনি পরবর্তী কমিটিতে শীর্ষ পদ চাইছেন। যুবদলের ওই নেতার ইন্ধনেই আবদুল আউয়াল খানের ওপর হামলা হয়।
টিপুর ওপর হামলার পর ওইদিনই এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে দুর্বৃত্তদের হাতে দুজন নেতার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক।
বিএনপির যুব সম্পাদক ও যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায়, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে এটা স্পষ্ট যে, এর সঙ্গে সরকারি এজেন্টরা কাজ করছেন, যারা চায় বিএনপি দুর্বল হোক, দলে অস্থিরতা তৈরি হোক।
টিপুর হামলার জের ধরে গত শনিবার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকায় ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলের ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। টিপুর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া রিয়াজকে ধাওয়া দিয়ে তাকে মারধর করে টিপুর অনুসারী শাহাদাত। এতে শাহাদাত পল্টন থানা ছাত্রদল নেতা মহির সহযোগিতা নেন। যার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রিয়াজ স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে মহির ওপর হামলা চালায়। এরা সবাই ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলের।
এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে নোয়াখালী অঞ্চলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘নোয়াখালী অঞ্চলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও গ্রুপিং আছে। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ বাইরে দেখা যেত না। ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারিতে আমাদের সেই সুনাম নষ্ট হলো।’ - আমাদের সময়
২০ অক্টোবর/এমটিনিউজ/আসিফ/এআর
�