মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:২৫:৪৭

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে মৃত্যু ২১ হাজার

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে মৃত্যু ২১ হাজার

নিউজ ডেস্ক : মাত্র এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২১ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ পথচারী। এই অনুমিত হিসাব ২০১২ সালের। বিশ্ব নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা বলেছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্বে সড়ক নিরাপত্তায় আগের চেয়ে অগ্রগতি হয়েছে। এরপরও প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা নিহত হয় প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষ। সংস্থাটির মহাসচিব মার্গারেট চ্যান বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ক্ষতি অপূরণীয়, বিশেষ করে দরিদ্র দেশের গরিব মানুষের জন্য। তবে বাংলাদেশের সরকারি হিসাব বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিমাণ দিন দিন কমছে। সরকারি হিসাবে, ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২ হাজার ৫৩৮ জন। ওই বছর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২ হাজার ৬৩৬টি। ২০১৩ সালে দুর্ঘটনা ঘটে ২ হাজার ২৯টি। নিহত হন ১ হাজার ৯৫৭ জন। আর ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ২ হাজার ৬৭ জন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তানভীর হাসান প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশের হিসাবে ঘাটতি আছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবের পদ্ধতিও পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাঁর ধারণা, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় সাত থেকে আট হাজার মানুষ মারা যায়। তানভীর হাসান বলেন, পুলিশের হিসাবে সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে। কিন্তু এ জন্য যে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দরকার, সেটা নেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। আর সুস্পষ্ট কর্মসূচি ছাড়া দুর্ঘটনা কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর জানা মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরাসরি কোনো তথ্য সংগ্রহ করে না। বিভিন্ন মাধ্যম বা উৎস থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। এভাবে হতাহতের সংখ্যা দেওয়া কতটা বাস্তবসম্মত সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। গতকাল ডব্লিউএইচওর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা বিশ্বে যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মানুষ। এরপরও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা মোটামুটি আগের মতোই আছে। গত তিন বছরে বিশ্বের ৭৯টি দেশে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমেছে। তবে ৬৮টি দেশের আবার এই সংখ্যা বেড়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কমিয়ে আনার দিক দিয়ে যেসব দেশ ভালো সাফল্য দেখিয়েছে, তারা সেটি করেছে আইন জোরদার করা ও তা বাস্তবায়ন এবং সড়ক ও যানবাহন আরও নিরাপদ করার মাধ্যমে। ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান বলেন, এই প্রতিবেদন থেকে এটা পরিষ্কার যে, সড়ক নিরাপত্তা কৌশল জীবন রক্ষা করছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটা আমাদের দেখিয়েছে, এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি খুব মন্থর। নিজেদের হিসাব দিয়ে ডব্লিউএইচও জানায়, ২০১২ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২১ হাজার ৩১৬ জন। কিন্তু সংস্থাটি একই সঙ্গে এ তথ্যও দিয়েছে যে, সরকারি হিসাবে ওই বছর নিহত হয় দুই হাজার ৫৩৮ জন। সরকারের এই হিসাব করা হয়েছে দুর্ঘটনার পর পুলিশের মামলার ভিত্তিতে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, ওই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ নিহত হয়, তার সবচেয়ে বড় অংশ (৩২ শতাংশ) পথচারী। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ২৮ শতাংশ চারচাকার গাড়ি বা হালকা যানবাহনের যাত্রী, এ ধরনের গাড়ি বা যানবাহনের চালক ১৩ শতাংশ, ১১ শতাংশ দুই বা তিনচাকার মোটর গাড়ির আরোহী, বাসচালক বা যাত্রী ৮ শতাংশ, ভারী ট্রাকের চালক বা আরোহী ৬ শতাংশ এবং সাইকেলচালক বা আরোহী ২ শতাংশ। ডব্লিউএইচও বলেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাংলাদেশের জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। এই হিসাব তারা দিয়েছে, যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট রিসার্চ ল্যাবরেটরির ২০০৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সংস্থা ‘জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদ’। কিন্তু এই সংস্থার জন্য জাতীয় বাজেটে কোনো বরাদ্দ থাকে না। ২০১৪ সালে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৬টি। যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পর্যায়ে আইন থাকলেও শহরে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা নেই। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে আইন আছে। কিন্তু কেউ মদপান করে গাড়ি চালাচ্ছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা পরীক্ষা করা হয় না। এ ছাড়া গাড়ি চালানোর সময় সিটবেল্ট ব্যবহারের বিষয়েও কোনো আইন নেই। একইভাবে গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো আইন নেই। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ৯০ শতাংশ ঘটে মধ্য ও নিম্নআয়ের দেশগুলোতে। অথচ বিশ্বের মোট যানবাহনের ৫৪ শতাংশ আছে ওই দেশগুলোতে। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় আফ্রিকার দেশগুলোতে, আর সবচেয়ে কম ইউরোপের দেশে। ১০৫টি দেশে সিটবেল্ট ব্যবহারের ভালো আইন আছে যা সবাইকে মানতে হয়। গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের ভালো আইন আছে ৪৭টি দেশে। ওই সব দেশে নগর পর্যায়ে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা আরও কমাতে পারে। ৪৪টি দেশে সব চালক ও যাত্রীকে হেলমেট ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া যানবাহনভেদে শিশুদের সামনের আসনে বসা নিয়ন্ত্রণ করতে আইন আছে ৫৩টি দেশে।-প্রথমআলো ২০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে