শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:৩৫:০২

জঙ্গি অ্যাকশনে নারীরা : আর্জিনার পর এবার মর্জিনা

জঙ্গি অ্যাকশনে নারীরা : আর্জিনার পর এবার মর্জিনা

মুমতাজ আহমদ, সিলেট থেকে : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের রেশ না কাটতেই জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কেঁপে উঠলো সিলেট। সীতাকুণ্ড অভিযানের ৯ দিনের মাথায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির একটি বাড়িকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় সারা দেশে। সীতাকুণ্ডের মতো সিলেটেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি অ্যাকশনে নামেন নারী জঙ্গিও।

সীতাকুণ্ডের আর্জিনার পর সিলেটে অ্যাকশনে ছিলেন মর্জিনা। শিববাড়ি অভিযানের পুরো সময়ই আলোচনার তুঙ্গে ছিলেন এই মর্জিনাই। অভিযানের সময় পুলিশের বিরুদ্ধে মর্জিনাই প্রথম হুঙ্কার বার্তা ছোড়েন। শিববাড়িতে ‘আতিয়ামহল’ নামের যে বাড়িটিকে ঘিরে অভিযান পরিচালিত হয় সে বাড়ির মালিক সিলেট নগরীর আতিয়া ট্রেভেলসের স্বত্বাধিকারী উস্তার মিয়ার ভাষ্য, গত জানুয়ারিতে কাওসার আহমদ নামক এক ব্যক্তি দেশীয় ভোগ্যপণ্য ব্র্যান্ড প্রাণের ‘অডিট অফিসার’ পরিচয়ে বাসার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।

বাড়িটির পাঁচতলা ভবনের ২ থেকে ৫ তলা পর্যন্ত ২৯টি ইউনিটে ২৯ পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে একটি ইউনিটেই জঙ্গি পরিবারটির অবস্থান। উস্তার মিয়া জানান, কাওসার আহমদের স্ত্রী হচ্ছেন এই মর্জিনা বেগম। স্থানীয় অনেকের ভাষ্য, মর্জিনা বেগম সব সময়ই বোরকা পরে থাকতেন। পুলিশের সহায়তায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা এক নারী জানিয়েছিলেন, ওই বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে যারা থাকতেন তাদের মধ্যে স্ত্রীটি ঘরেও বোরকা পরে থাকতেন। পুরো ঘরে দেয়ালসহ সব জায়গায় দিনে রাতে সব সময়ই পর্দা টানানো থাকতো। ঘরে বাতি কম জ্বলতো। আলনা আর চেয়ার-টেবিল ছাড়া কিছুই ছিল না সে ঘরে। ওই নারী জানান, তিনি যখন বেরিয়ে আসছিলেন তখন নারীকণ্ঠে ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন।

‘জঙ্গি’ নারীটির নাম জানার পর পুলিশ তার নাম ধরেই আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। দুপুরে হ্যান্ডমাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয় ‘মর্জিনা বেগম, আপনি শুনতে পারছেন? আপনারা বেরিয়ে আসুন। আত্মসমর্পণ করুন। আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না।’ তবে পুলিশের এমন আহ্বানে ‘মর্জিনা বেগমে’র ক্ষিপ্ত স্বরই ভেসে আসে বাতাসে। ‘আমরা আল্লাহর পথে আছি। তাড়াতাড়ি সোয়াত পাঠান। দেরি করছেন কেন? আমাদের সময় কম।’ তখন পুরুষকণ্ঠ থেকেও একই রকম বার্তা আসে।

জঙ্গি কর্মকাণ্ডে এতদিন পুরুষদের সক্রিয় দেখা গেলেও ক্রমে নারী জঙ্গিরাও যেনো আরো সামনে এগিয়ে আসছেন। জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ এসব নারী অনেকে আটক হলেও এখনও নারী জঙ্গিরা কোমরে বোমা বেঁধে পুলিশকে রুখে দিতেও পিছপা হচ্ছেন না। সর্বশেষ সীতাকুণ্ড অভিযানেও নারী জঙ্গিরা ছিলেন সামনের কাতারেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ ক’জন নারী জঙ্গির মৃত্যুও হয়েছে ইতোমধ্যে।

২০১৬ সালের ২৪শে ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলায় জঙ্গি অভিযানের সময় আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হন সাকিনা নামের এক নারী জঙ্গি। সীতাকুণ্ডের সর্বশেষ জঙ্গিবিরোধী অভিযানেও নিহত হন জুবাইরা ইয়াসমীন নামের আরো এক নারী। ওই অভিযানের সময়ই পুলিশের হাতে স্বামী ও সন্তানসহ আটক হন আরজিনা বেগম নামের এক নারী।

সিলেটের শিববাড়ি অভিযান প্রসঙ্গে পুলিশের ভাষ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান ও তল্লাশি শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে সন্দেহজনক বাড়িটির সন্ধান মেলে। যে বাড়িটিতে নারী জঙ্গি মর্জিনা বেগম স্বামী নিয়ে উঠেছিলেন ৩ মাস আগে। সীতাকুণ্ডের আর্জিনার সঙ্গে সিলেটের মর্জিনার কোনো যোগাযোগ আছে কিনা তা অভিযান শেষেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। এমজমিন
২৫ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে