নিউজ ডেস্ক : বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কাঁদলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কাঁদালেন অসংখ্য নেতা-কর্মীকেও।৩৩২ পৃষ্ঠার এই বইতে বঙ্গবন্ধুর ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কারাগারে অন্তরীণ থাকার সময়কার দৈনন্দিন ডায়েরি আকারে লেখনী স্থান পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম, কারাভোগের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। পিতার সঙ্গে দীর্ঘ স্মৃতি বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। তিনি নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন উপস্থিত সবাইকে। কখনো বাবা শেখ মুজিব, কখনো মা ফজিলাতুন নেছা মুজিব, কখনো ছোটভাই শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। প্রায় ৩২ মিনিটের বক্তৃতায় বার বার চোখের পানি মুছেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। শেখ হাসিনার চোখে পানি দেখে কেঁদেছেন সবাই। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদেছেন কর্মীদের অনেকে। সেখানে উপস্থিত বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনরাও অশ্রু সামাল দিতে পারলেন না।
এমিরেটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ অনোয়ার হোসেন এবং অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বইটির ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জাসান নূর বইটির কিয়দংশ অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ডায়াজে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা,বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এখন এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব দেশবাসীর। বঙ্গবন্ধু এ দেশের জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। এখন এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব দেশবাসীর।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কেবল মাত্র আমারই পিতা নন, তিনি সমগ্র বাংলাদেশের পিতা এবং দেশের জনগণের পিতা। বঙ্গবন্ধু সবকিছু জনগণের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। এই বাড়ি থেকে শুরু করে সবকিছু জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছি। বাকী শুধু একটাই এই দেশটাকে যদি সেভাবে গড়ে দিয়ে যেতে পারি। আমি আশা করি এই বইয়ের মধ্যদিয়ে আপনারা আরো ভালোভাবে জানতে পারবেন। দেশকে জানতে পারবেন, মানুষগুলিকে জানতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময়ই রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা আবৃত্তি করতেন ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই। নি:শেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ উদাত্ত কন্ঠে তিনি এই উচ্চারণটা সবসময় করতেন। আজকে এটাই তার জীবনে বাস্তব হলো-নি:শেষে প্রাণটা তিনি দিয়ে গেলেন কিন্তু তাকে যারা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল, পারল না। তিনি সেই ইতিহাসে আবারো ফিরো এসেছেন এবং এই বাংলার মাটিতে আবার ফিরে এসেছেন। আর আমার একটাই কাজ তার বাংলাদেশকে সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, আরেকটা কাজ আমি করেছি-যে এখানে অনেকের কথা তিনি (বঙ্গবন্ধু) লিখেছেন। অনেক ভালো ভালো কথা লিখেছেন, কিন্তু এরমধ্যে অনেকেইতো পরে বেঈমানী করে চলে গেছে। কিন্তু যার সম্পর্কে তিনি যা লিখেছেন সে লেখায় আমি কোন হাত দেইনি। একটি কথাও কাটিনি ঠিক সেইভাবেই আছে। এরমধ্যেই অনেকেই বেঁচে নেই আবার অনেকেই বেঁচে আছেন যাই হোক এখন এগুলো পড়লে তারাই লজ্জা পাবে কিনা আমি জানি না। কিন্তু তিনি যাকে যেভাবে দেখেছেন, বর্ননা দিয়েছেন, যেভাবে ভালকথা লিখেছেন সব হুবহু ঐভাবেই রেখে দিয়েছি। কারণ সকল মানুষের সত্য কথাটা জানা উচিত। আর এত সাহস আমার নেই যে তার লেখায় হাত দেব। কাজেই তিনি যেভাবে লিখেছেন সেভাবেই আমরা তা রাখার চেষ্টা করেছি।
২৯ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি