সোমবার, ০৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:৫১:৫০

ভাইয়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রানা

ভাইয়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রানা

নিউজ ডেস্ক: বাবা মারা গেছেন দেড় যুগ আগে। বড় ভাই কোলেপিঠে করে বড় করেছেন। সেই বড় ভাইয়ের লাশ বাড়িতে রেখে গতকাল রবিবার এইচএসসির প্রথম পরীক্ষায় বসতে হয়েছে মাসুদ রানাকে। তার ভাই আবু সাঈদকে গত শনিবার রাতে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

রাতেই তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নিয়ে আসার পর দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু ছোট ভাই মাসুদের এইচএসসির প্রথম পরীক্ষা। তাই এসব কাজে সে অংশ নিতে পারেনি। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পর বিকেলে ভাইয়ের জানাজা নামাজে সে অংশ নেয়।

মাসুদ দাউদকান্দি উপজেলা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে গতকাল উপজেলার বিলকিছ মোশাররফ কেন্দ্রে অশ্রুভেজা চোখ আর ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পরীক্ষা দেয়। সে পেন্নই গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ছেলে।

সরেজমিনে জানা যায়, পেন্নই গ্রামের আবদুস সামাদ ১৪-১৫ বছর আগে ইমামের চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় মারা যান। পরে সবার বড় আবু সাঈদ সংসারের হাল ধরেন। অনেক চরাই-উতরাই পার করে ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।

সেই ভাইকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করায় লাশ ফেলে কোনোমতে পরীক্ষা দিতে যেতে চায়নি মাসুদ। তার পরও প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যায়। কেন্দ্রে প্রবেশের সময় শিক্ষকরা তাকে সান্ত্বনা দেন। তার পরও মনের বল আর সাহস নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে আর চোখের পানি মুছছে।

বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা শেষে মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে সে প্রথমে বাক্শক্তি হারিয়ে ফেলে। পরে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘জম্মের পর বাবাকে দেখিনি। বড় ভাই আবু সাঈদই আমাদের সংসারের হাল ধরেন। যে ভাইয়ের কারণে আজ এ পর্যন্ত আসছি, তাঁকে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তাঁর লাশ ফেলে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসছি। এ পৃথিবীতে আমার মতো হতভাগা পরীক্ষার্থী মনে হয় আর কেউ নেই। ’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মাসুদ ছাত্র হিসেবে খুবই ভালো। লিখতে পারলেই ভালো ফল করতে পারবে। সে যাতে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য আমরা তাকে সাহস দিচ্ছি। ’
৩ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে