নিউজ ডেস্ক: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কষ্টের শেষ নেই সাধারণ মানুষের, বেঁচে থাকার জন্য মামুলি দামে বিক্রি করছেন গরু-ছাগল। দেশের সর্ব বৃহৎ গরুর বাজার হলো সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা গরুর হাট। এ দুই জেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের গরু-ছাগল বিক্রি করার জন্য প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা গরুর হাটে নিয়ে আসে। তবে এবার চলতি বোরো মৌসুমে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের সব কয়টি হাওরের বাঁধ ভেঙে কৃষকের বছরের একমাত্র কাঁচা ও আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় ওইসব হাওর এলাকার কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বেঁচে থাকার জন্য মামুলি দামে বিক্রি করছেন গরু-ছাগল।
এলাকার কৃষকেরা নিজেরা বাঁচার তাগিদে ও গো-খাদ্য সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার ধর্মপাশা গরুর হাটে হাজার-হাজার গরু নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য।এরই সুযোগে ওই গরুর হাটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু কিনতে আসা শত-শত ব্যাপারী এক জোট হয়ে অর্ধেক মূল্যে কৃষকদের ওইসব গরু কিনছেন। আর দিশেহারা কৃষকরা নিরুপায় হয়েই তাদের গরু অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ধর্মপাশা মধ্য বাজারে গরুর হাটে গিয়ে জানা যায়,অন্যান্য হাটবারে এখানে এক থেকে দেড় হাজার গরু কেনা- বেচা হতো। কিন্তু এ বৃহস্পতিবারে গরুর হাটের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। হাওর এলাকার কৃষকেরা এ হাটে গরু বিক্রি করতে গত দুইদিন আগে থেকেই তাদের গোয়ালে থাকা গরু ছাগল নিয়ে বাজারে আসতে থাকেন।
কৃষকদের বিক্রি করতে আনা গরু মূল গরুর হাট ছাড়িয়ে ধর্মপাশা সদরের পূর্ব বাজার থেকে শুরু করে হাসপাতাল মোড় হয়ে ধর্মপাশা থানার সামনের ব্রীজ পর্যন্ত কৃষকরা তাদের গরু বিক্রি করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন।এমনকি সমস্ত বাজারজুড়েই ছিল শুধু গরু-ছাগল। বাজারে যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা পথচারিরাও চলাচল করাই দায় ছিল।
ধর্মপাশা বাজারে তার গোয়ালে থাকা ১০ গরু নিয়ে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাড়ির সামনের সোনামড়ল হাওরে এবার আমি ৪০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। কিন্তু অসময়ে বাঁধ ভেঙে আমার সব জমির আধাপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।এখন নিজেদের বাঁচার তাগিদেই আমার গোয়ালে থাকা ছোট-বড় ১০টি গরু গত ৫ দিন আগে এক পাইকার বাড়িতে গিয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম বলার পরেও আমি বিক্রি করিনি। তবে আজ নিরুপায় হয়ে আমার ওই ১০টি গরু মাত্র ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দাম হচ্ছে।
একই ধরনের মন্তব্য করেন,উপজেলার গুলুয়া গ্রামের কৃষক তুহিন মিয়া, ইকবাল হোসেন, রাজাপুর গ্রামের কৃষক সেনারুল, বালিজুরী গ্রামের কৃষক ওয়াজ উদ্দীন,পাশের মোহনগঞ্জ উপজেলার মান্দার বাড়ি গ্রামের কৃষক ফেরদৌস মিয়া, একই উপজেলার তেথুলিয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমানসহ বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা অর্ধশতাধিক কৃষক।
ঢাকার ডেমরা এলাকার গরু ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, তিনি প্রায় ১ হাজার গরু কেনার টার্গেট নিয়ে এই ধর্মপাশা বাজারে এসেছেন। তবে বাজারে অন্যান্য হাটের তুলনায় আজ ১০ গুণ গরু বেশি উঠায় ও দাম কম থাকায় আমি সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত ১ হাজার ২৩০টি গরু কিনতে পেরেছি।
ধর্মপাশা গরুর হাটের মালিক মিটু চৌধুরী জানান, অন্যান্য হাটের তুলনায় আজ বাজারে কয়েক গুণ গরু বেশী উঠার কারণেই পাইকররা এক হয়ে কম দামে গরু কিনে নিয়েছে।
১৪ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর