শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩৮:২৩

জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত হেফাজতকে পাশে রাখতে চায় আ.লীগ

জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত হেফাজতকে পাশে রাখতে চায় আ.লীগ

রাহাত: কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান ঘোষণার বিষয়টিকে হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আপসকামিতা হিসেবে দেখছেন সরকারের সমালোচকরা। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণে হেফাজতের দাবির সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোভাবের সাদৃশ্যও রাজনৈতিক মহলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।সর্বশেষ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত র‌্যালি বাতিলের ঘোষণা রাজনীতির মাঠে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দলটির সভাপতিম-লীর দুই জন সদস্য জন নেতা বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামকে পাশে রেখে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট নিজেদের পক্ষে রাখাই হলো এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। কওমিতে যে ভোট ব্যাংক আছে, তা যেন কোনোভাবেই বিএনপির দিকে ঝুঁকতে না পারে, সেজন্য কিছু কৌশল নেওয়া হয়েছে।

এ পরিকল্পনা থেকেই নির্বাচনের আগে হেফাজতের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে বাড়তি চাপ নিতে চায় না ক্ষমতাসীন দলটি।’ গত বুধবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়ও নির্বাচনের আগ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামকে কাছে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাও। বৈঠকে উপস্থিত তিন জন নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কওমি সনদ দেওয়া হেফাজতের সঙ্গে কোনও আপসের ফল নয়। রাজনৈতিক সামাজিক বাস্তবতা ও জনগরে আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ উচ্চ আদালতের সামনে থেকে ভাস্কর্য অপসারণে হেফাজতের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য আমারও পছন্দ হয়নি।’ তার এমন বক্তব্য অনেকটা হেফাজতের দাবি মেনে নেওয়ার মতো বলেই মনে করছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার ব্যক্তিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের কারণেই হেফাজতের সঙ্গে দ্বিমতে যাবে না আওয়ামী লীগ। কওমির সনদ, উচ্চ আদারতে ভাস্কর্য হেফাজতকে খুশি করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, র‌্যালি বাতিলের পেছনের অন্যতম কারণ। কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৪ লাখ। এসব ছাত্র-ছাত্রীর পরিবার রয়েছে। হিসাব করলে এখানে বড় একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। ভোট ব্যাংকের হিসাবকে মাথায় নিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে কাছে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই এই ভোট ব্যাংক হাত ছাড়া করতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন দলটি। পাশাপাশি এসব শিক্ষার্থীকে মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসার চেষ্টাও স্বীকৃতির পেছনের কারণ।

দুই জন সম্পাদকম-লীর নেতা জানান, কওমি মাদ্রাসায় বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে। তারা যেন নির্বাচনের আগে বিএনপির দিকে ঝুঁকতে না পারে, সেজন্যই কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভোটের রাজনীতির কারণে উচ্চ আদালত চত্বরে ভাস্কর্য নিয়েও হেফাজতের যে দাবি, তার সঙ্গে দ্বিমতে জড়াচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফলউল্যাহ বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে আপস, এটি দেশের পক্ষের, জাতির পক্ষের সিদ্ধান্ত।’ তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসায় ১৪ লাখ ছাত্রছাত্রী পড়ে, তাদের দেশ থেকে, সমাজ থেকে তো আমরা বের করে দিতে পারি না। তাদের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এসব শিক্ষার্থীর মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসতে হবে। তারা যেন জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়াতে না পারে। এই উদ্দেশ্যেই কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে আর কোনও কারণ নেই।’ পহেলা বৈশাখের র‌্যালি বাতিল হেফাজতের দাবির প্রতি নতি স্বীকার করা কিনাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈশাখ হলো একটি উৎসব। আর এর উদ্দেশ্য হলো পালন করা। এটি যে কোনোভাবেই পালন করা যেতে পারে।’

সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কওমি সনদের স্বীকৃতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে সেখানে অধ্যায়নরত একটি বিশাল জন গোষ্ঠীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা।’ তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকায়ন আনা হবে। হেফাজতের সঙ্গে আপস করে কওমিকে স্বীকৃতি দেওয়া বা ভাস্কর্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে আপসের কোনও সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, ‘র‌্যালি বাতিলের সিদ্ধান্ত কেবল জনভোগন্তির কথা বিবেচনা করেই নেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভা-পতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘কওমি সনদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার প্রয়োজনে। এখানে কোনও কৌশল অবলম্বন করা হনি।’ তিনি বলেন, ‘আধুনিকায়ন করে মেইনস্ট্রিমে আনা যাবে এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে।’ এ সিদ্ধান্তের ফলে জঙ্গি কর্মকা- কমতে থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।-বাংলাট্রিবিউন
১৪ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে