রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ০৪:৫৮:৫৪

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ : প্রধানমন্ত্রী

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা : দেশপ্রেমিক এবং ভালো নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হিসেবে গড়ে ওঠার জন্যই ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্যই তাদের ইতিহাস জানতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নবনির্মিত বহুতল ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যেন জানতে পারে যে কত মহান ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই স্মৃতিচিহ্নগুলো তারা দেখবে। সেই স্মৃতিগুলি তারা উপলদ্ধি করবে। অন্তরে ধারণ করবে এবং সেভাবেই নিজেদের চরিত্রকে গঠন করবে, দেশপ্রেমে তারা উদ্বুদ্ধ হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা নতুন প্রজন্মের মানুষের চরিত্র গঠনের জন্যই জরুরি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পঁচাত্তরের পর এমন একটা সময় এসেছিল- তখন যারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এটা বলতে ভয় পেতো। এটুকু বলতে আতংকগ্রস্ত হতো, দ্বিধাগ্রস্ত হতো। আর যারা সম্পূর্ণ দালালিটা করতে পেরেছে তাদের কথা আলাদা। আমি অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপে মুক্তিযোদ্ধারা গর্বভরে বলতে পারেন ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা।’

সে সময় জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল এবং জয়বাংলা স্লোগান দিতে গিয়ে বহু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের ছুরি মারা হয়েছে। সমাজে তারা নানাভাবে অত্যাচারিত-নিগৃহীত হয়েছে। এমনকি জাতির পিতার ছবি প্রচার হতো না টেলিভিশনে। অনেকের ছবির মধ্যে যদি জাতির পিতার ছবিও থাকতো হাহলে সেই ছবিকে কৌশলে ঢেকে প্রচার করা হতো, এমনকি আঙুল দিয়ে ঢেকে রাখতেও দেখা গেছে। সত্য কোনদিন চাপা থাকে না। সত্যের শক্তি অনেক বেশি। আজকে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা ফিরে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্বোধনে এসেছি। আমরা দুটি বোন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি পেয়েছিলাম। কিন্তু অন্য কোন সম্পত্তি না থাকলেও আমরা কোনদিন ভাবিনি যে বাড়িটি আমরা ব্যবহার করবো। কারণ, এই বাড়ি থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দিয়েছেন। এই বাড়ি থেকেই অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনা যেতো। এই বাড়ি থেকেই জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন,  ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তৎকালীন ইপিআর’র ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশবাসীর নিকট ঘোষণা প্রচার করা হয়। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন টেলিগ্রাম এবং টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে সেই ঘোষণা আগেই বিভিন্ন জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেন যে, দেশ আক্রান্ত হলেই যেন এই ঘোষণা প্রচার করা হয়। তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই ছোট বাড়িটাতেই ছিলেন। আর এই বাড়িতেই তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। সেই বাড়ি আমরা ব্যবহার করবো আমাদের সেই ধরনের আকাঙ্খা বা লোভ কোনটাই ছিল না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীবৃন্দ। পরে, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারা ২ লাখ মা-বোন স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী জাদুঘর চত্বরে রক্ষিত শিখা অম্লান প্রজ্বলন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ফলক উন্মেচনের পর পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখেন।

১৬ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে