বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭, ১২:১৪:২৯

নাঈম আশরাফের যত অপকর্মের খতিয়ান

নাঈম আশরাফের যত অপকর্মের খতিয়ান

রুদ্র মিজান : নিজের পাপের খতিয়ানের বয়ান নিজেই দিচ্ছে নাঈম আশরাফ। বনানীর হোটেলে দুই তরুণী সম্ভ্রমহানী মামলায় আলোচিত চরিত্র নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে নানা চমক লাগানো তথ্য দিচ্ছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত আসার পেছনে নানা প্রতারণার গল্পও খুলে বলেছে নাঈম।

এদিকে নাঈম আশরাফের নারীঘটিত নানা অপকর্মের কাহিনী ক্রমেই বেরিয়ে আসছে। মূলত নারী সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে প্রভাবশালী-বিত্তশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। নায়িকা, মডেলদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণেই তার ডাক পড়তো বিভিন্নস্থানে। প্রতি রাতেই বাসা কিংবা হোটেলে নারী সাপ্লাইয়ের কাজ করতো নাঈম আশরাফ। নাঈমের নারী কানেকশন ছিল বিপুল। কম বয়সী, চলচ্চিত্রে-মডেলিংয়ে নতুন- এরকম শতাধিক নারী কানেকশন ছিল নাঈমের। ডাকলেই তারা সাড়া দিতো। এ ছাড়াও ইয়াবা আসক্তি রয়েছে তার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরকম অনেক মডেল, নায়িকার সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি পাওয়া গেছে নাঈমের। নাঈম রিমান্ডে যাওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন তারা। এমনকি ওই নারীদের সান্নিধ্য যারা পেয়েছেন তাদেরও আতঙ্কের শেষ নেই। নাঈমের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল প্রতিষ্ঠিত অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছেন যে, তার বিষয়ে কোনো তথ্য দিয়েছে কি-না। জানা গেছে, অনেক নায়িকা, মডেলরা সহজেই তার প্রস্তাব লুফে নিতো। শুরুটা নিজেই করতো নাঈম। বন্ধুতার সুযোগ নিয়ে মিশতো। পরে কৌশলে নিয়ে যেত রাতের আড্ডায়। তারপর শুধু নিজে একা না। অন্যের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহার করা হতো এ নারীদের। এজন্য নগদ টাকা থেকে দামি গিফটের ব্যবস্থাও থাকতো।

সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জনের কাছে রিয়েলিটি শো থেকে চলচ্চিত্রে আসা এক নায়িকার কদর ছিল বেশ। নাঈম ডাকলেই তিনি আসতেন। তার হাতে কাজ না থাকায় প্রায় সন্ধ্যায় নাঈমের কথামতো বিভিন্ন হোটেলে ও বাসার পার্টিতে অংশ নিতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার তিনটি বিয়ে হয়েছিল। তার বাসা উত্তরায়।

ওই নায়িকার আরেক বান্ধবী রয়েছে। দুটি ফিল্মে অভিনয় করেছেন সেই বান্ধবী। তার সঙ্গে নাঈমের অন্তরঙ্গ ছবি পাওয়া গেছে বলে সূত্রে জানা গেছে। আরেক মডেল সম্পর্কে জানা গেছে, ওই মডেল একটি টেলিভিশনে আলো নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। বিভিন্ন গান ও পণ্যের মডেল হয়েছেন তিনি। অনেক বিত্তশালীদের মনোরঞ্জনের জন্য নাঈম তাকে ব্যবহার করতো।

নাঈমের কানেকশনের মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় আরেক মডেল। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার বাসা। সাত বছর বয়সী তার একটি বাচ্চা রয়েছে। ওই মডেলের বাসাতেও আসা-যাওয়া ছিল নাঈম আশরাফের। নাঈমের দেয়া তথ্যমতে, অনেক নায়িকা, মডেলরা পেশাগত কাজ করে যে টাকা আয় করেন তার চেয়ে বেশি টাকা আয় হতো তার অ্যাসাইনমেন্টে। টাকার জন্য তারা নিজেরা স্বেচ্ছায় নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।   

তবে ব্যতিক্রমও ঘটেছে কয়েক নারীর ক্ষেত্রে। নাঈমের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তারা সরে গেছেন। তাদের একজন জনপ্রিয় একটি ফিল্মের নায়িকা। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেছেন তিনি। গত বছরের মার্চে তার সঙ্গে তুমুল আড্ডা দিয়েছিল নাঈম। একপর্যায়ে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেয় তাকে। কিন্তু ওই নায়িকা চটে যান। রাজি হননি তিনি। শুরুতে নায়িকা-মডেলদের কাছে নিজেকে বিত্তশালী হিসেবে উপস্থাপন করতো নাঈম।

এজন্য নিজের হালিম নাম পরিবর্তন করে নাঈম আশরাফ কখনও কখনও রোমান নামে পরিচয় দিতো। জীবনে অনেক কিছু করলেও এই মামলার আগে কোনো নারী তার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ করেনি। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলার তদন্তের প্রয়োজনে তাকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই ঘটনা ছাড়াও নানা তথ্য দিয়েছে নাঈম আশরাফ। তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত ২৮শে মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে সম্ভ্রমহানীর ঘটনায় গত ১৭ই মার্চ মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাঈম আশরাফকে। পরদিন থেকে সাতদিনের রিমান্ডে আনা হয় তাকে। নাঈমের প্রকৃত নাম হালিম। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্দাইল গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের পুত্র হালিম ঢাকায় এসে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় নাঈম আশরাফ। প্রতারণা, নারী ও মাদক ‘সাপ্লায়ার’ হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত সে।  এমজমিন
২৪ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে