নিউজ ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য স্থাপন ইস্যুটি নতুন মোড় নিয়েছে। শনিবার রাতে এনেক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি পুনরায় স্থাপনের পর এটি অপসারণের প্রতিবাদকারীরা নতুন কোন কর্মসূচি দেননি। তবে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলা হেফাজতে ইসলাম।
সংগঠনটি দাবি করেছে দেশ থেকে চিরতরে গ্রিক দেবির ভাস্কর্য অপসারণ করতে হবে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’ এর আদলে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তুলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল হেফাজতে ইসলাম। এই দাবির মধ্যেই গত ১১ই এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজত নেতা ও আলেম ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওই ভাস্কর্য অপসারণের পক্ষে মত দেন।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের পর এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন সংগঠন। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, সংস্কৃতিকর্মী ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা ধর্মীয় শক্তির কাছে সরকারের নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ উল্লেখ করে ভাস্কর্য পুনরায় স্থাপনের দাবি তুলেন। এ দাবিতে বিক্ষোভে নামা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে।
তবে ভাস্কর্য অপসারণ করায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে হেফাজত। এটি তাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় বলেও দাবি করা হয়।
এদিকে ভাস্কর্য পুনরায় স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন চলার মধ্যেই শনিবার মধ্যরাতে তা সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে পুনরায় স্থাপন করা হয়। পুন:স্থাপনের পরের দিন অপসারণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। নতুন কোনো কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়নি তারা। তবে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে গতকাল।
এনেক্স ভবনের সামনে পুনরায় ভাস্কর্য স্থাপনের প্রতিবাদে শনিবার রাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন হেফাজত কর্মীরা। গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভ করেছে হেফাজত। সংগঠনটির আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী এক বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ভাস্কর্যটি সামনে না পিছনে বসবে এটি কোনো ইস্যু নয়। তারা দেশ থেকে চিরতরে গ্রিক দেবির ভাস্কর্য অপসারণ চান।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তার চারজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল জামিন শুনানি শেষে মহানগর হাকিম একেএম মঈনুদ্দীন সিদ্দিকী জামিনের এ আদেশ দেন। জামিন পাওয়া চারজন হলেন- ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি মোর্শেদ হালিম, একই সংগঠনের কর্মী জয় এবং উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফ নূর।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে নেতাকর্মীরা মিছিল সহযোগে সুপ্রিম কোর্টের দিকে এগোতে চাইলে শিশু একাডেমির সামনে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান থেকে পানি এবং রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতেই তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন শাহবাগ থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) মোহাম্মদ মোফাক্কারুল ইসলাম। মামলার এজাহারে অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
সরকারি কাজে বাধাদান এবং দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারকৃতদের শনিবার আদালতে হাজির করা হলে মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার রোববার (গতকাল) জামিন শুনানির দিন রেখে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এমজমিন
২৯ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি