মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৪৭:৪৭

ছিল বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা

ছিল বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা

নিউজ ডেস্ক : হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েই সংঘবদ্ধ চক্র প্রস্তুতি নিয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য জড়ো হওয়া কয়েক হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে লক্ষ্য করে চারদিক থেকে একের পর এক হ্যান্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করার। কয়েক মুহূর্তেই বড় আকারের নাশকতায় ব্যাপক জীবনহানির মাধ্যমে সরকারকে চরম বিপাকে ফেলার চক্রান্ত ছিল। তবে আগের দিন রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশ সদস্য হত্যার সঙ্গে জড়িত একজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলার পর কামরাঙ্গীরচর থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করায় ওই গ্রেনেডগুলো তাজিয়া মিছিলে ব্যবহৃত হতে পারেনি। গোয়েন্দা তদন্তে এসব রোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সরকারকে চাপে ফেলার জন্য ‘বাংলাদেশে বিদেশিরা নিরাপদ নয়’ বোঝাতে ‘কোনো একজন শ্বেতাঙ্গকে’ হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারকে খুন করা হয়। তবে তাভেলা সিজার টার্গেট ছিলেন না। নৈরাজ্য তৈরি করে আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে চাপে ফেলার অপকৌশল হিসেবে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার ও ৩ অক্টোবর রংপুরে একই কায়দায় জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই দেশে নানা অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত। ছোট বড় আরও কয়েকটি হামলার পরিকল্পনার কথাও ফাঁস হয়ে যায়। আরও কয়েকজন পশ্চিমা নাগরিককে হত্যা করা ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ওপর হামলার ছক আঁকা হয়। স্পর্শকাতর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অকস্মাৎ হামলা চালানোর আগাম চক্রান্তের কথাও জানতে পারেন গোয়েন্দারা। ফলে একের পর এক হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায় গোয়েন্দাদের তৎপরতায়। হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার মাত্র একদিন আগেই গাবতলী এলাকায় পুলিশের এএসআই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তা ব্যূহ গড়ে ওঠায় হামলাকারীরা পরিকল্পনা মাফিক এগোতে পারেনি। তাদের সব টিম যথাসময়ে পুরান ঢাকায় পৌঁছাতেও পারেনি। ফলে একযোগে হামলা চালানোর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, ২৩ অক্টোবর শনিবার রাত পৌনে ২টার দিকে পুরান ঢাকার হোসনি দালানের সামনে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতের মধ্যে নারী ও শিশুসহ এখনো ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেয়। পূজা শেষ হতেই ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই শিয়া মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু গোয়েন্দা সদস্যদের কাছে তথ্য ছিল, বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা চালাতে ঢাকার বাইরে থেকে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরা রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে মহানগর পুলিশ বিশেষ নির্দেশনায় রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে সার্বক্ষণিক চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো অব্যাহত রাখে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও বিভিন্ন স্থানে আলাদা চেকপোস্ট বসায়। ২২ অক্টোবর রাত পৌনে ৯টার দিকে গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে এমন একটি চেকপোস্টে তল্লাশিকালেই দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন। সেখানে সন্দেহভাজন বাসযাত্রী কয়েক যুবককে তল্লাশি করার সময় ওই এএসআইকে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একজনকে আটক করে। এ হত্যাকাণ্ডের পর রাজধানী জুড়ে রেড অ্যালার্ট শুরু হয়। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির টহল বাড়ে। রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে চলে তল্লাশি। ফলে অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক নিয়ে রাজধানীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই হামলাকারী চক্রের সব সদস্য তাজিয়া মিছিলের স্পট ‘হোসনি দালানের সামনে’ যথাসময়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা আরও একাধিক পশ্চিমা নাগরিককে হত্যার টার্গেট করে। মার্কিন দূতাবাসের সতর্কবার্তা থেকে এ তথ্য প্রকাশ হয়। কিন্তু বিদেশি অবস্থানকারী সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া প্রহরা এবং কূটনৈতিক এলাকা চিহ্নিত গুলশান-বারিধারাসহ আশপাশ জুড়ে র‌্যাব-বিজিবির সার্বক্ষণিক টহল ব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। বিদেশিসহ কূটনৈতিকদের মনেও স্বস্তি ফিরে আসে। ঠিক এ মুহূর্তেই সংঘবদ্ধ ওই চক্র ভিন্ন ভিন্ন স্থাপনা ও ব্যক্তিদের টার্গেট করে এগোচ্ছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। সর্বশেষ দুর্বৃত্তরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাশকতার হুমকি দিয়েছে। এ কারণে বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। যাত্রীদের কড়া তল্লাশির নির্দেশ ও দর্শনার্থীদের ভিতরে প্রবেশের ক্ষেত্রেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে গতকাল এ রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। কারা এই সংঘবদ্ধ চক্র?: সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট একটি চক্রকে দায়ী করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম এবং ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির একই গোত্রের এবং একই সূত্রে গাঁথা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাংগঠনিকভাবে আইএসের অস্তিত্ব না থাকলেও তাদের দোসর হয়ে জঙ্গি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম এবং ছাত্রশিবির নাশকতার নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আইএস বিবৃতি দিলেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ড নেই। ধারণা করা হচ্ছে, যারাই হরকাতুল জিহাদ, তারাই হুজি, তারাই জেএমবি, তারাই আনসারুল্লাহ, তারাই শিবির। এদের আলাদা করে দেখার দরকার নেই।’ -বিডি প্রতিদিন ২৬ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে