মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:০২:৪৮

নাশকতার আশঙ্কায় বিমানবন্দরে সতর্কতা

নাশকতার আশঙ্কায় বিমানবন্দরে সতর্কতা

নিউজ ডেস্ক : নাশকতার আশঙ্কায় হযরত শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে সরকার। এসব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সব ধরনের দর্শনার্থীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরগুলোতে চলমান সংস্কার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নাশকতার আশঙ্কা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোন সতর্কতা জারি করা হয়নি। আগের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এপিবিএনের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিমানবন্দরে নিয়োজিত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মৌখিক নির্দেশের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পাশাপাশি যাত্রীদের কঠোর তল্লাশিসহ দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিটি স্পর্শকাতর জায়গায় তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। এপিবিএনের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল জানান, সকাল থেকে বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রী ছাড়া কোন দর্শনার্থীকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান জানান, আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটতে পারে বলে তথ্য পেয়েছি। এ কারণে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে যাতায়াত করা যাত্রী ও বিদেশী যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পুনর্বিন্যাস করা একটি রুটিন ওয়ার্ক। এটা কিছু দিন পর পর করা হয়ে থাকে। এরই মধ্যে আমরা সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি সুপারভিশন বাড়ানো হয়েছে। এদিকে বিমান মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ম. শেফায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোন প্রকার অ্যালার্ট জারি করা হয়নি। তা সত্ত্বেও কোন কোন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন গণমাধ্যমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে মর্মে সংবাদ প্রচার হচ্ছে। বিষয়টি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিন্যস্ত করতে এবং সংস্কার ও মেরামত কাজ সম্পাদন করার জন্য সাময়িকভাবে দর্শনার্থীদের প্রবেশ স্থগিত রাখা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোন রেড অ্যালার্ট নয়, আমরাই হুঁশিয়ার হচ্ছি। গতকাল বিকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়েছে এয়ারপোর্টে (শাহজালাল) যেভাবে চলাফেরা করি সেখানে সিকিউরিটি আরেকটু বাড়ানো দরকার। সেজন্যই এখানে একটু আলাপ-আলোচনা করে আমরা এটাকে আরেকটু স্টেংদেং করেছি, আর কিছু না। কোন রেড অ্যালার্ট বা অন্য কিছু না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা হঠাৎ কেন শক্তিশালী করা হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে মনে হয় কিছু ঢিলেঢালা ছিল, সেগুলো ঠিক করার জন্য আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম। কোন নাশকতার আশঙ্কা থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে ধরনের সিস্টেম আমরা চিন্তা করছি তা সব বিদেশী এয়ারপোর্টে চালু আছে। বরং আমাদের এয়ারপোর্টে যে ইচ্ছা সেই চলে যেত। সেটা যাতে না যায় সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, কোন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এভাবে চলে না। সব কিছুরই একটা সিস্টেম আছে। আমরা একটু ঢেলে সাজাচ্ছি। অ্যালার্ট কোন বিষয় নয়। আমরাই হুঁশিয়ার হচ্ছি। এটা রুটিনওয়ার্ক। আজ থেকে ?শুরু হলো, এটা কন্টিনিউ থাকবে। এভাবেই চলবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হঠাৎ এ উদ্যোগ একটু প্রশ্ন জাগায় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা ফোর্স সব সময়ই অ্যালার্ট রয়েছে, সবকিছু দেখছে। আপনারা খুব ভাল করে দেখছেন আমরা সবগুলোকে ধরে ফেলছি। সবগুলোকে শনাক্ত করছি। আমি আগেও বলেছি, আমি সব আপনাদের জানাব। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছে, ধীরে ধীরে সবই আমরা জানাবো। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশেপাশে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জারি করেছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। গতকাল সোমবার থেকে দেশের অন্যতম প্রধান এই বিমানবন্দরে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। চলছে তল্লাশি। পুলিশ বলছে, নাশকতা হতে পারে এমন তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে। এছাড়া হতে পারে বিমান বন্দরে হামলাও। এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) এ কে এম শহিদুর রহমান জানান, ‘নগরীতে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা বা যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই হতে পারে। এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। তাই পুরো নগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অধিকাংশ যাত্রীই মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, ওমানের যাত্রী। এসব যাত্রী বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের তল্লাশি করা হচ্ছে। আবার বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে যাত্রী প্রবেশেও তল্লাশি করছে পুলিশ। এছাড়া পুরো বিমানবন্দরে রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। সিলেট অফিস জানায়, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা। গতকাল সকাল থেকে বিমানবন্দরের ভেতর কোন দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ওসমানী বিমানবন্দরে আগে থেকেই নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি ছিল। এবার সেই কড়াকড়ি পেয়েছে নতুন মাত্রা। তবে গত রোববার পর্যন্ত বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল থেকে কোন দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই এমন কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকেও ঢুকতে বাধা দেয়া হচ্ছে। সকালে দুইজন পুলিশ সদস্য অনুমতি ছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। সকালে ওসমানী বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বিমানবন্দরে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বলেন, ওসমানীতে আগে থেকেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল। তবে গতকাল থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। -মানবজমিন ২৬ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে