মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:২৯:৫২

বাংলাদেশ নিয়ে স্ট্র্যাটফোরের পূর্বাভাস

বাংলাদেশ নিয়ে স্ট্র্যাটফোরের পূর্বাভাস

মেহেদী হাসান : আগামী দিনগুলোতে জঙ্গি হামলা হলেও সরকারের পতন বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখছে না যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা স্ট্র্যাটেজিক ফোরকাস্ট (স্ট্র্যাটফোর গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স)। তবে জঙ্গিরা যদি সফলভাবে পশ্চিমা বা পশ্চিমাদের স্বার্থগুলোতে হামলা চালাতে পারে তবে পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। স্ট্র্যাটফোরের আরো আশঙ্কা, '২০১৬ সালের প্রাক্কালে জঙ্গি হামলার মাত্রা বৃদ্ধি ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সামরিক শক্তি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আবারও নিজেকে যুক্ত করতে পারে।' স্ট্র্যাটফোর বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ বছরের শেষ তিন মাসের পূর্বাভাস গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশ করে। এদিকে গত শুক্রবার পুরান ঢাকায় হোসেনী দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে হামলার পর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের উদ্দেশ্যে হালনাগাদ নিরাপত্তা বার্তায় বলেছে, বিদেশিদের জন্য ঝুঁকি বিবেচনায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা বার্তায় যা বলা হয়েছিল তা এখনো বাস্তবসম্মত ও বলবৎ রয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসআইএল (সংক্ষেপে আইএস) হোসেনী দালানে হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশে তার নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দূতাবাস পশ্চিমাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে এ ধরনের পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারের অসাধারণ উদ্যোগের পরও ঝুঁকি রয়ে গেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা স্ট্র্যাটফোর গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্সের পূর্বাভাসে 'ইসলামী জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সংগ্রাম করছে' শিরোনামে। একটি অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'দুই বছরের রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার পর বাংলাদেশ তার নিজের ইসলামী জঙ্গিদের মোকাবিলা করছে। বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও এর ইসলামী শরিকদের রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে ঢাকার মনোযোগ দেশের বর্ধিত রাজনৈতিক সংকটের কারণে সৃষ্ট উগ্রবাদের দিকে স্থানান্তর হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলো জামায়াতে ইসলামীর মতো গোষ্ঠীগুলোকে টার্গেট করছে।' বাংলাদেশ প্রসঙ্গে স্ট্র্যাটফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতি সহানুভূতিশীলদের জন্য বাতায়নও সৃষ্টি করেছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও বিদেশিদের ওপর হামলাও বেড়েছে। যেহেতু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের ঝুঁকিকে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তাই ঢাকা সন্ত্রাসবিরোধী সহায়তা ও রাজনৈতিক আচ্ছাদনের জন্য নয়াদিল্লির দিকে তাকিয়ে থাকা অব্যাহত রাখবে।' বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আরো বলা হয়েছে, 'উচ্চ মাত্রার সহিংসতার সঙ্গে ঢাকার অভ্যস্ত হওয়া বাড়ছে। তাই জঙ্গি হামলায় সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবে বা এই তিন মাসে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে এমন সম্ভাবনা কম। তবে জঙ্গিরা যদি সফলভাবে পশ্চিমা রাজনীতিক ও লক্ষ্যগুলোতে হামলা চালাতে পারে তবে অবশ্যই পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাই সে অনুযায়ী ঢাকা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যবসাকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করছে।' স্ট্র্যাটফোরের পূর্বাভাসে দক্ষিণ এশিয়া প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জঙ্গি কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ চলমান নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো জোরদার করবে। তবে আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলে জঙ্গিবাদ, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদ, নেপালে সংবিধানকে ঘিরে সম্ভাব্য বিক্ষোভ থেকে কাঠমাণ্ডুর সঙ্গে মাওবাদী বিদ্রোহীদের নতুন করে সশস্ত্র সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি বাড়ছে। আর এসব বিবেচনায় ভারতকে তার সীমান্তজুড়ে নজরদারি বাড়াতে হতে পারে।' স্ট্র্যাটফোরের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কাজের পাশাপাশি নয়াদিল্লি তার নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলোতে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কাজ করবে। নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার ফলে আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘদিন ধরে চীনের অনুগ্রহপ্রার্থী ওই দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উভয় দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতি নয়াদিল্লি হাত বাড়াবে। সেখানে অর্থবহ বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতা দিতে ভারত হিমশিম খাবে। প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে পূর্বাভাস রয়েছে। উল্লেখ্য, বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা স্ট্র্যাটফোর তার প্রতিবেদনের গ্রাহকদের তালিকা গোপন রাখে। ২০১২ সালে উইকিলিকস প্রকাশিত কূটনৈতিক বার্তাগুলোর মধ্যে স্ট্র্যাটফোরের ৫০ লাখেরও বেশি প্রতিবেদন ছিল। এতে ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র স্ট্র্যাটফোরের প্রতিবেদনগুলোকে গুরুত্ব দেয়। স্ট্র্যাটফোর নিজেকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক গোয়েন্দা ও পরামর্শক ফার্ম বলে দাবি করে থাকে। আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জর্জ ফ্রিডম্যানের নেতৃত্বে স্ট্র্যাটফোরের শীর্ষ নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট ও স্পেশাল অপারেশন কমান্ডের কর্মকর্তা, নেভি সিলের সাবেক কর্মকর্তারা রয়েছেন। -কালেরকণ্ঠ ২৬ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে