নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে বিচারিক আদালতে শুনানির দিন হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। মামলার তারিখে আদালতে রানাকে হাজির করা হয় না জানিয়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে করা অ্যাটর্নি জেনারেলের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর প্রধান বিচারপতি বলেন, 'এতে তো আপনারই লজ্জা পাওয়ার কথা। রাষ্ট্র কী করে?’
বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বিভাগের বেঞ্চ জামিন বিষয়ে আপিল আদালতের দেয়া আদেশ সংশোধন চেয়ে এমপি রানার করা এক আবেদনের শুনানিকালে এ মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি শুনেছি, আদালতে ধার্য তারিখে তাকে (রানা) আনা হয় না।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এতে তো আপনারই লজ্জা পাওয়ার কথা। রাষ্ট্র কী করে?
এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল রানাকে আদালতে ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরের নির্দেশনা চান। আদালত আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে ধার্য তারিখে রানাকে বিচারিক আদালতে হাজিরের আদেশ দেন।
গত ৮ মে এই মামলায় রানার জামিন চার মাসের জন্য স্থগিত করে আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এ সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখা হয়।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জিতে যান রানা। পরে তাকে দলে নেয় আওয়ামী লীগ। আর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে খুনের মামলায় নাম আসার পর গত ১৬ জানুয়ারি রানা ও তার তিন ভাইকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ ১৪ জনকে আসামি করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত ৬ এপ্রিল আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক ও সমির হোসেন। আসামিদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও সমির হোসেন আগেই গ্রেপ্তার হয়ে টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন। আসামি ফরিদ হোসেন কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। আর আসামি আবদুল হক পলাতক অবস্থায় কয়েক মাস আগে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন।
এমটিনিউজ/এসএস