ঢাকা : ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। প্রথম দিনে টিকিট বিক্রির শুরুতেই কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রী চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রয়োজনীয় টিকিট সংগ্রহ করতে টিকিট প্রত্যাশীরা এর আগের দিন সোমবার মধ্যরাত থেকেই অবস্থান নেন স্টেশনে। সকাল ৯টা থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে একটানা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, কোনো কাউন্টারের সামনেই তিলধারণের জায়গা ছিল না। বরাবরের মতোই আগের রাতে এসে কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেন টিকিট প্রত্যাশীরা। সকালে যখন কাউন্টার খোলা হয়, টিকিটের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে হাজারো মানুষ।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি তাদের। তবে টিকিট বিক্রির সময়টা সকাল ৯টার পরিবর্তে এক ঘণ্টা এগিয়ে সকাল ৮টা করা হলে ভালো হয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে শুধু কমলাপুর, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ই-টিকিটের ২৫ শতাংশ ও ভিআইপি এবং রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১০ শতাংশ মোট ৩৫ শতাংশ টিকিট ছাড়া বাকি সব টিকিট কাউন্টার থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। একজন যাত্রী ৪টি টিকিটের বেশি ক্রয় করতে পারবেন না। ই-টিকিট ও ভিআইপি টিকিট নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
এদিকে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে কমলাপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে নামানো হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অতিরিক্ত সদস্য। ঢাকা, ট্রেনে যাত্রীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতোঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি ও স্থানীয় পুলিশ, র্যাব সদস্যরা টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রয় করা হচ্ছে। আজ (বুধবার) ১৬ সেপ্টেম্বর ২১ সেপ্টেম্বরের, আগামীকাল ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ সেপ্টেম্বরের, ১৮ সেপ্টেম্বর ২৩ সেপ্টেম্বরের ও ১৯ সেপ্টেম্বর ২৪ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২০টি কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে অগ্রিম টিকিট। এবার ঈদের ৫ দিন পূর্ব থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনগুলোয় সেলুন বরাদ্দ দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, ক্রয়কৃত টিকিট ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকছে না। এবার ঈদে সাত জোড়া স্পেশাল ট্রেন আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে চলাচল করবে। এসব ট্রেনের মধ্যে রয়েছে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, চাঁদপুর স্পেশাল-১, চাঁদপুর স্পেশাল-২, পার্বতীপুর স্পেশাল, খুলনা স্পেশাল, শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ও ২। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহনে ১৯৯টি লোকোমোটিভের সঙ্গে আরো ২৫টি ইঞ্জিন সরবরাহ করা হবে। দৈনিক ৮৮৬টি কোচের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৩৮টি কোচ যুক্ত করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শন করতে ও অগ্রিম টিকিট সংগ্রহে আসা যাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ হাজার ২৪টি কোচ যাত্রী পরিবহন করবে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আড়াই লাখ যাত্রী এসব কোচে যাতায়াত করবে। এছাড়া আগামী ঈদুল ফিতরের আগেই রেলওয়েতে যোগ হবে আরো ২৭০টি নতুন কোচ।
মন্ত্রী বলেন, রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার যাত্রী রাজধানী ছাড়বেন। টিকিট কালোবাজারি রোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কাউন্টার ও স্টেশনে অর্ধশতাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। স্টেশন এলাকায় রেলওয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও ম্যাজিস্ট্রেট স্টেশনে রয়েছে। টিকিট বিক্রি ও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষ পরিবার নিয়ে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেন, এটি কষ্টদায়ক। তাই শিডিউল বিপর্যয় যাতে না হয় সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ