আ.লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী নানকের বিপরীতে বিএনপির কে?

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে ঢাকা-১৩ আসনেও। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগরের আংশিক নিয়ে গঠিত এ আসনটি।

এই আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবেই অনেকটাই নিশ্চিত। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদল হতে পারে। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম সবুজ সংকেত পেয়ে গণসংযোগ করছেন।

এ ছাড়াও আরও দুই একজন প্রার্থীর নাম শোনা যায়। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়ম মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এই আসনে অন্য দলের তেমন কোনো প্রার্থীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৩ এ দলীয় প্রার্থী হিসেবে আবারও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকেই ভরসা রাখছে আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে এবারও তাকেই দেওয়া হচ্ছে নৌকা। গত সাড়ে আট বছরে এ এলাকার ব্যাপক উন্নয়নে অবদান ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন, দেখভাল, সমস্যার সমাধান করায় এবারও তার ওপর আস্থা রাখছেন স্থানীয়রা।

এ ছাড়াও দলের যে কোনো ক্রাইসিস মুহূর্তে সামনে থেকে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং যুবলীগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানককে এ আসন থেকেই নির্বাচন করাবেন দলের হাইকমান্ড। এ ছাড়াও এ আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগর সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও সাবেক এমপি হাজী মকবুলসহ অনেকেই।   

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে মনোনয়নে নির্বাচন করেছিলেন বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এবার সেখানে নতুন প্রার্থী দিয়ে আলালকে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-১৫ আসনে (কাফরুল) নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এ ব্যাপারে আলালকে দলের হাইকমান্ড আভাসও দিয়েছেন।

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, বিএনপির হাইকমান্ড আমাকে কাফরুলে কাজ করার দিকনির্দেশনা দিয়েছে। তবে এটাও চূড়ান্ত নয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। অন্যদিকে আবদুস সালাম জানান, বেগম জিয়া তাকে একাধিকবার ঢাকা-১৩ আসনে কাজ করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

এই আসনে আবদুস সালাম ছাড়াও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান ও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহ-সভাপতি সাবেক কমিশনার আতিকুল ইসলাম মতিন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তারা দুজনই নিজেদের মতো করে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত এ আসনে জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাড়া আর তেমন কারও নাম শোনা যাচ্ছে না। বর্তমান এমপি হিসেবে উনি এলাকায় যে উন্নয়নের কাজ করেছেন তা গত ৫০ বছরেও হয়নি। আগে এ এলাকার যে জমির দাম ছিল ১০ লাখ টাকা কাঠা। এখন তা ৫০ লাখ টাকা কাঠা হয়েছে শুধু উন্নয়নের জন্য। রাস্তাঘাট ভালো হওয়ার জন্য।

মোহাম্মদপুর এলাকায় অনেক মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসা থেকে কখনোই সরকারবিরোধী মিছিল বা হরতালে পিকেটিং করতে পারেনি। এমনকি মতিঝিলে হেফাজতের আন্দোলনের সময়েও এখান থেকে কোনো মিছিল অংশ নেয়নি বলে জানা গেছে। স্থানীয় এমপি নানক যেভাবেই হোক তাদের ট্যাকেল করে রেখেছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, ঢাকা-১৩ নং আসনের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাট, মসজিদ- মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ খেলার মাঠ দখলমুক্ত ও সংস্কার করেছেন। এ ছাড়াও সুস্থ বিনোদনের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক সময় এ এলাকা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। গ্যাসের তীব্র সংকটে চুলায় হাঁড়ি উঠত না। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক।

খেলার সব মাঠগুলো প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করেছেন তিনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১০ সালে সারাদেশে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও তিনি মোহাম্মদপুর আদাবর ও বছিলা এলাকায় বিশেষভাবে গ্যাসের ব্যবস্থা করেন। এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তিনি মোহাম্মদপুর আদাবর ও শেরেবাংলা নগর এলাকায় ৬৭টির অধিক পানির পাম্প বসিয়ে পানির সংকট নিরসন করেন। যার সুফল ভোগ করছে ঢাকা ১৩ আসনে বসবাসরত বাসিন্দারা।

৩৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন করে ঢাকা-১৩ আসনকে লোডশেডিংমুক্ত করেন নানক। রাস্তাঘাট ছিল খানাখন্দে ভরা। কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না। ঢাকা- ১৩ আসনের রাস্তা ও ড্রেনের কাজ সম্পূর্ণ করেন নানক। চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তাঘাটের ব্যাপক সংস্কার করেন। জাতীয় সংসদ ভবনের খালটি ড্রেনেজ সিস্টেমে কল্যাণপুর খালে সংযুক্ত করেন। যার ফলে এখন প্রবল বৃষ্টিতেও কোথাও পানি জমে থাকে না।   

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্যামলী মাঠ, নুরজাহান রোড, কবরস্থান মাঠ, জান্নাতবাগ মাঠ, খিলজি রোড মাঠ, লালমাটিয়া মাঠ, শহীদ পার্ক মাঠ, রায়ের বাজার বৈশাখী মাঠ, বাঁশবাড়ি সবুজসংঘ মাঠসহ সব মাঠগুলোকে দখলমুক্ত করে সংস্কার করেছেন এমপি নানক। অথচ- এই মাঠগুলোতে এক সময় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দোকান বসতো, বালির ব্যবসা চলতো, সন্ধ্যার পরে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই মোহাম্মদপুর, বিহারি ক্যাম্প, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাদক আর  সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। ১৬২ জন চিহ্নিত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এ এলাকায় ভাড়ায় কাজ করত। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, খুন, চাঁদাবাজি, ভূমিদখল, মাদক ব্যবসা করত। কোন ভদ্রলোক এই এলাকায় বসবাস করতেন না। সাধারন মানুষজন তাদের কাছে জিম্মি ছিল।

এমপি নানক সাহেবের সৎ সাহসে তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান হয়েছে। এসব কারণে এ আসন থেকে এবারও আওয়ামী লীগের টিকিট পাচ্ছেন অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। গত রমজানেও এলাকায় বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় ইফতার কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। বিয়েশাদিসহ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও তিনি নিয়মিত যোগদান করছেন। এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েও তার নামে পোস্টার সাটানো হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছেন।

মোহাম্মদপুর টাউন হল মসজিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদানও দিচ্ছেন রাজধানীর ফকিরাপুলে জন্ম নেওয়া বিএনপির এই নেতা। এদিকে বিএনপিতে এও আলোচনায় আছে. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বরিশাল উজিরপুরে তার নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এর আগে তিনি ওই আসন  থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ঢাকা-১৩ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আবদুস সালাম আরো জানান, ‘দলের নীতি নির্ধারকদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ীই আমি কাজ করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনবোই ইনশাআল্লাহ।’ অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দল আমাকে সুযোগ দিলে এলাকাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করবো। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব।’ বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি