মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭, ০১:১৪:৫৯

অটোরিকশা কেনার কথা বলে সপরিবারে বাড়ি ছাড়ে জঙ্গি আলম!

অটোরিকশা কেনার কথা বলে সপরিবারে বাড়ি ছাড়ে জঙ্গি আলম!

কামাল মৃধা, নাটোর : অটোচার্জার (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) কেনার জন্য বাবার কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছিল ভালুকায় বোমার আঘাতে নিহত জঙ্গি আলম। কিন্তু সেই টাকা না পাওয়ায় সে বাবাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, এক লাখ টাকা জোগাড় করে তবেই সে বাড়ি ফিরবে।

এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ৭ এপ্রিল বাড়ি থেকে সপরিবারে বের হয়েছিল আলম। সোমবার (২৮ আগস্ট) বিকালে সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের তালতলা রাগের মোড় এলাকায় জঙ্গি আলমের বাড়ি পৌঁছালে এমনই দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।

কিন্তু বাড়ি ফেরার আগেই মৃত্যু সংবাদে জঙ্গি আলমের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। জঙ্গি আলমের মায়ের দাবি, যে করেই হোক, তার সন্তানকে তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক। তবে তার বাবার দাবি, বোমায় নিহত লাশটি যদি আলমেরই হয়, তবে তিনি সেই লাশ গ্রহণ করবেন না।

রবিবার (২৭ আগস্ট) ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর গ্রামে শেখ ভিলায় বোমার আঘাতে নিহত হয় জঙ্গি আলম। তার বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের তালতলা রাগের মোড়ের পাশেই। তার শ্বশুরবাড়ি একই উপজেলার ভাটোদাঁড়া গ্রামে।

আলমের সম্বন্ধি ফারুক হোসেন ও তার মা (আলমের শাশুড়ি) ফিরোজা বেগম জানান, গত ঈদুল ফিতরের কিছুদিন আগে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে স্ত্রী পারভীন ও দুই সন্তান ইয়াছিন আর ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে আলম নরসিংদীর ঘোড়াশালের উদ্দেশে বাড়ি থেকে চলে যায়। বেশ কিছুদিন পরও তাদের কোনও খোঁজ পায়নি তারা।

অবশেষে ফারুক ঘোড়াশালে প্রাণ কোম্পানিতে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাদের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঈদের দুই দিন আগে হঠাৎ আলম তাদের ফোন করে জানায়, সে (আলম) ঢাকায় একটি প্রাইভেট গাড়ি চালায়। সে সপরিবারে ঢাকায় ভালো আছে। তারা ঈদের মধ্যে বাড়িতে আসবে। কিন্তু এরপর থেকে আলমের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সোমবার বিকালে আলমের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তার মা আম্বিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে প্রলাপ বকছেন। ‘আমি দশ মাস দশ দিন আলমকে পেটে ধরেছি। আমার আলম কোনও জঙ্গি না। তোমরা যেভাবেই পারো আমার আলমরে আমার কাছে নিয়ে আসো।’ পাশেই কান্নারত অবস্থায় তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আলমের তিন বোন ফাতেমা,শাহিদা আর খাদিজা।

ফাতেমা জানান, তারা তিন বোন দুই ভাই। ভাই-বোনের মধ্যে আলম দ্বিতীয়। আর ছোট ভাই শহরের কান্দিভিটুয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। আলম ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে শহরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করতো। একপর্যায়ে ট্রাকের ড্রাইভার হয়। সেসময় একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে ট্রাক চালানো ছেড়ে দিয়ে রাজমিস্ত্রীর জোগালি হিসেবে কাজ শুরু করে। সম্প্রতি সে নাটোর প্রাণ কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কাজ শুরু করে।

আলমের বাবা আবুল কালাম জানান, প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করা অবস্থায় আলমকে ঘোড়াশালে বদলি করা হয়। কিন্তু সে ওখানে যেতে চায়নি। তাই তার কাছে সে অটোচার্জার কেনার জন্য এক লাখ টাকা চায়। বাকি টাকা সে শ্বশুরবাড়ি থেকে জোগাড় করে অটোচার্জার চালিয়ে সংসার চালাবে। কিন্তু হঠাৎ করে এতো টাকা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে ছেলেকে জানান তিনি।

এ নিয়ে তার সঙ্গে আলমের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আলম বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর সে গত ৭ এপ্রিল দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে, এক লাখ টাকা জোগাড় করেই তবে সে বাড়ি ফিরবে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকেই তাদের সঙ্গে আলম ও তার স্ত্রী-ছেলেদের যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে আলমের বাবা আবুল কালাম দাবি করেন, বেশ কিছুদিন ঢাকা, ঘোড়াশালসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও সন্ধান করতে না পারায় তিনি গত ৬ জুলাই নাটোর সদর থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। রবিবার রাত তিনটার দিকে দুজন গোয়েন্দা পুলিশ তার বাড়িতে এসে জানায়, আলম ও তার স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে।

তাদের কাছ থেকে আলম সম্পর্কে বিভিন্ন খোঁজ নিয়ে তারা চলে যান। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই গাড়ি পুলিশ স্থানীয় তেলকুপি মোড়ে এসে আলমের খোঁজ করার সময় বোমার আঘাতে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানায়। আলমের মৃত্যুর বিষয়টি তারা সোমবার দুপুরে নিশ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেন।

আবুল কালাম বলেন, ‘লাশটি আলমের হলে আমি তা গ্রহণ করবো না। কোনও রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধীর লাশ আমরা গ্রহণ করবো না। তবে তিনি দাবি করেন, যারা তার ছেলের মত ভালো ছেলে-মেয়েদের শেষ করছে সরকারের কাছে তিনি তাদের সুষ্ঠু বিচার চান।

প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর গ্রামে শেখ ভিলায় আধা-পাকা ওই বাড়িতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে জঙ্গি আলম নিহত হয়। সেসময় ওই বাড়িতে নিহতের স্ত্রী ও সন্তান থাকলেও ঘটনার পরপরই তারা পালিয়ে যায়। এরপর থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ।

সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার ভেতরে সোমবার (২৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তারা নিহতের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পরে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে সাতটি বোমা উদ্ধার করা হয়। বাংলা ট্রিবিউন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে