ফারুক আলম : মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্ত পুলিশ এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। একের পর চলছে অমানুষিক নির্যাতন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ডিআইজি (অব.) পি. আর. বড়ুয়া এক সাক্ষাৎকার বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমানবিক।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে পি. আর. বড়ুয়া বলেন, আমরা এক সময় মিয়ানমারের বৌদ্ধদের ভাল জানতাম। এখন তারা যে ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এর নিন্দা করা ছাড়া আমাদের কোনো ভাষা নেই। এরপরেও আমরা রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও বিতাড়ণ বন্ধে কাজ করছি। রোহিঙ্গারাও মানুষ, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো উচিত নয়।
বৌদ্ধ শান্তিপ্রিয় ধর্ম একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ ও ‘জীব হত্যা মহাপাপ’, নীতিকথাগুলো বলেছেন গৌতম বুদ্ধ। মানবতাবাদী হিসেবে জগৎসংসারে তিনি প্রতীক হয়ে আছেন। প্রবর্তন করেছেন বৌদ্ধ ধর্মের। গৌতম বুদ্ধ আরো বলেছেন, আমার এই ধর্ম শুধু বৌদ্ধদের জন্য নয়, পৃথিবীতে সব ধর্ম-বর্ণের জন্য। আর সেখানে মিয়ানমার সরকার ও সেখানকার জনগণ রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের বৌদ্ধরা বৌদ্ধ ধর্মের কলঙ্ক। এটি আমার কথা নয়, সব বৌদ্ধের কথা। আমি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেখানে যাই সেখানেই বলার চেষ্টা করি, মিয়ানমারের বৌদ্ধরা বৌদ্ধ ধর্মের কলঙ্ক। তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গারা কোথা থেকে রাখাইন প্রদেশে এসেছে এ বিষয়ে পি. আর. বড়ুয়া বলেন, ১৯৩৩ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসল আমলে মিয়ানমার দিল্লি থেকে শাসিত হত। তখন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালী অঞ্চলের কিছু লোক বাণিজ্যিক কাজে বার্মায় (মিয়ানমার) যেত। বাণিজ্যিক কাজ শেষে অনেকে দেশে (বাংলাদেশ) ফিরে আসে আবার অনেকে বার্মায় স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করে।
তিনি বলেন, ওই সময়ের ব্রিটিশ সরকার রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞেস করেছিল, তোমরা বার্মায় থাকবে নাকি ভারতে যাবে। তখন রোহিঙ্গারা বলেছে, তারা বৌদ্ধদের সঙ্গে থাকবে, হিন্দুদের সঙ্গে নয়। এরপর যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল তখন বৌদ্ধরা জাপানিদের সমর্থন করে আর রোহিঙ্গারা ব্রিটিশদের সমর্থন করে। মূলত সেখান থেকেই বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি। মতবিরোধ থাকতেই পারে, কেউ কারও ওপর নির্যাতন চলাতে পারে না।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। যেসব রোহিঙ্গা এদেশে এসেছে মানবিক কারণে তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে একশ বছর ধরে বসবাস করছে, তাদেরকে কেন তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে? মিয়ানমার সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে অচিরেই যেন তাদেরকে দেশে ফিরে নেয়ার ব্যবস্থা করে। -আমাদেরসময়.কম
এমটিনিউজ/এসবি