বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৪৪:৪০

মার্কিন পত্রিকায় প্রকাশিত জয়ের লেখা সেই নিবন্ধে যা আছে

মার্কিন পত্রিকায় প্রকাশিত জয়ের লেখা সেই নিবন্ধে যা আছে

ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের চরম রক্ষণশীল ‌‘ওয়াশিংটন টাইমস'  পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। এতে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কড়া সমালোচনা করে বাংলাদেশ ইসলামী মৌলবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি জামায়াতকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটন টাইমস (ওয়াশিংটন পোস্ট নয়) নামের পত্রিকাটিতে জয়ের নিবন্ধটি ছাপা হয়েছে।

এই পত্রিকাটিতে এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কথিত একটি নিবন্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

জয়ের লেখা ‘আনমাস্কিং টেররিস্টস ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদীদের মুখোশ উন্মোচন) শীর্ষক নিবন্ধটি তুলে ধরা হলো:

ভয়ঙ্কর ইসলামিক স্টেট মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বালুতে সার্বভৌম সীমানা পুনরঙ্কন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী এদের এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হুমকি ভয়াবহ এবং ক্রমবর্ধমান। এসব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা এবং পরাস্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আইনপ্রণেতারা এবং নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা নতুন মিত্র এবং কৌশল খুঁজে বের করার জন্য দিনরাত কাজ করে চলেছেন।

একটি মুসলিম জাতি, বাংলাদেশ, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্ভরতায় মাথা তুলে  দাঁড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের গবির্ত মিত্র বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে সেক্যুলার, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গণতান্ত্রিক মডেল এবং সন্ত্রাস দমনের যুদ্ধে এক অদম্য বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে চরমপন্থী ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী।

বাংলাদেশের পুলিশ সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় দুই তলা বিশিষ্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে অবিস্ফোরিত ২০টি বিস্ফোরকের ডিভাইস, ২৫টি বাঁশের লাঠি এবং জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট উগ্রপন্থী সাহিত্য  জব্দ করেছে। পুলিশ বলেছে, এসব বোমা ‘খুবই শক্তিশালী’ এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরনের দেশীয় বোমা জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসী হামলায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত এক প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব ডিভাইস নিরপরাধ মানুষদের ভয়ানক ক্ষতি সাধনের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা এবং তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ওপর প্রয়োগ করা হতো। পুলিশ বলছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ আক্রমণের জন্য ইসলামের পবিত্র কোরবানির ঈদের সময়কে বেছে নেয়া হয়।

শান্তিপ্রিয় বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্যবস্তু বানানো জামায়াতে ইসলামী জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই তারা ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ওপর প্রায়শই নির্মমভাবে সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে।

রক্তাক্ত সেই সংঘাতের সময় জামায়াতের সদস্যরা পাকিস্তানী সৈন্যদের ৩০ লাখ মানুষ হত্যা, ২ লাখ নারী ধর্ষণ এবং লাখ লাখ মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করতে সহায়তা করেছিল।

সম্প্রতি ভয়ানক সহিসংতার ঢেউয়ের জন্য পরিকল্পিত যে সন্ত্রাসী পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়া হয় সে ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে সম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ পাকাপোক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের চার সেক্যুলার ব্লগারের হত্যার খবর আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষকই বিস্মিত নন যে এসব নিহত ব্লগার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে লেখালেখি করতেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জামায়াতে ইসলামী আইসিটির রায়ের প্রতিবাদে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে, দেশব্যাপী শত শত বোমা নিক্ষেপ করেছে এবং এতে শিশু ও বয়স্করাও নিহত হয়েছে।

সাম্প্রতিক ওই বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় ১৩ জামায়াত নেতাকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রভাবশালী সাবেক দুই সংসদ সদস্যও রয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, কার্যত সাবেক এই দুই সংসদ সদস্যই বর্তমানে দলটিকে পরিচালনা করছিলেন। ঘটনা সত্য হলে, এটি অতিরিক্ত প্রমাণ বহন করে যে, বাংলাদেশ একটি বৈধ রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশে মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনটি তৎপরতা চালাচ্ছে।

চরমপন্থী সহিংসতার এই ঊর্ধ্বগতি আরো বেশি ভয়াবহ এই কারণে যে কাকতালীয়ভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়েদার সম্প্রসারণের সঙ্গে এটি মিলে গেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে আল কায়েদার কথিত প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরির ৫৫ মিনিটের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভিডিওটিতে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ‘জিহাদের পতাকা তুলে নিতে’ বাংলাদেশিদের আহ্বান জানানো হয়েছে। এমটি ঘটবে না- তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

জামায়াতের নেতৃত্ব দলটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লুকানোর কোনো প্রচেষ্টাই করেনি। জামায়াত ও তার সহযোগী সংগঠণগুলো তরুণ ছাত্রদের তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য প্ররোচিত করছে। তারা আল কায়েদার মতো বাংলাদেশে একটি মোল্লাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। আল-কায়েদাকে সহায়তাকারী জামায়াত এটা প্রমাণ করেছে যে, তারা যে কোনো উপায়ে এই উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠা করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির প্রয়োজন একটি স্থিতিশীল, সন্ত্রাস মুক্ত দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশ এই ব্যাপারে এ অঞ্চলের জন্য একটি বাতিঘর হিসাবে দাঁড়িয়েছে আছে। ধর্মনিরপেক্ষ আইন দ্বারা দেশটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এই অঞ্চলে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্র হওয়া উচিত। কারণ এটা তার (যুক্তরাষ্ট্রের) জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ সমৃদ্ধ করেছে। এ কারণে জামায়াতে ইসলামীকে একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা করা উচিত নয়।

খালেদার সমালোচনা
এর আগে ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি এই পত্রিকাটিতে খালেদা জিয়ার নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় যাতে জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য সরাসরি আহ্বান জানানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।

ওই নিবন্ধ প্রকাশের পর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সমালোচনায় ফেটে পড়েন। সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য, নিবন্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

তবে তৎকালীন সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ২০১৩ সালের ২৯ জুন সংসদে বলেছিলেন, ‘বলা হয়েছে, আমি নাকি চিঠি দিয়ে এই সুবিধা বন্ধ করেছি। কিন্তু আমি কোনো চিঠি পাঠাইনি।’

এ সময় জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম সেদিনই বলেন, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে বিএনপি ওয়াশিংটনকে চিঠি দেবে।

খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে নিবন্ধ পাঠানোর কথা অস্বীকার করার পরপরই সংসদে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই নিবন্ধটি বিরোধীদলীয় নেতারই।

‘অস্বীকার করতে পারবেন না। এখানে লেখা আছে- ‘খালেদা জিয়াস আর্টিকেল, ফরমার প্রাইম মিনিস্টার, প্রেজেন্ট অপজিশন লিডার’। ইন্টারনেটে খুঁজলেই যে কেউ দেখতে পাবে,’ বলেছিলেন শেখ হাসিনা।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে