নিউজ ডেস্ক: আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহিংসতা ও সংঘর্ষের পর থেকে ৯০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থা।
নতুন করে মাত্র এক মাসের মধ্যেই এত বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে ওঠায় কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোসহ রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন আশ্রয়স্থলে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়েছে।
আগে থেকেই দু’লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস শরণার্থী শিবিরসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রামে। এর সঙ্গে এই লাখখানেক মানুষ আরও বেশি যোগ হওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আগে থেকেই ত্রাণসহায়তা দেয়া বিভিন্ন সংস্থা ও আঞ্চলিক সংগঠন।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনের ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য নিহত হয়। তারপরই জবাব হিসেবে ব্যাপকভাবে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালাতে থাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
এখন পর্যন্ত জবাবি হামলা ও সংঘর্ষে ৪শ’র বেশি মারা গেছে। আর প্রাণভয়ে হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে।
গত পাঁচদিনেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টায় নাফ নদীতে নৌকা ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ রোহিঙ্গার।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের হত্যা ও ঘরবাড়ি পোড়ানোর জন্য ওই রোহিঙ্গা জঙ্গিদের দোষারোপ করছে। কিন্তু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বক্তব্য অনুসারে, বার্মিজ সেনা সদস্যরাই নির্বিচারে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা পুড়িয়ে দিচ্ছে।
স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ছবি এবং ফুটেজেও সেনাবাহিনীর হামলার সত্যতা মেলে। এমনকি সেনারা রোহিঙ্গা শিশুদের শিরোশ্ছেদ করে ও অন্যদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস।
পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দাবি, বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমার থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের পুরোপুরিভাবে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যেই এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
মুসলিমদের পাশাপাশি এখন আক্রান্ত এলাকাগুলোতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে স্থানীয় হিন্দু ধর্মের জনগোষ্ঠীও। মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বেঁচে থাকার তাগিদে তারাও পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৮৬ জনকে মিয়ানমারের সেনারা হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে আশ্রয় নেয়া সনাতন ধর্মের লোকজন।
কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়িত্বরত জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীদের সর্বশেষ হিসেব অনুসারে, গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারে হওয়া সেনা সহিংসতার সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এতজনের জায়গা করে নেয়াটা বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
নতুন আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বালুখালি শরণার্থী শিবিরের আকার বাড়িয়ে নিচ্ছে দরকার মতো। খড়কুটো, ত্রিপল আর বাঁশ দিয়ে মৌসুমী ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচার আশায় একটু ছাদ বানানোর চেষ্টা করছে তারা।
‘আমরা ঘর বানানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এখানে যথেষ্ট জায়গাই নেই,’ বললেন চারদিন আগে মিয়ানমার থেকে আসা ২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসেন, ‘এখানে কোনো এনজিও আসেনি। আমাদের কাছে কোনো খাবারও নেই। কয়েকজন নারী রাস্তার পাশে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। অসুস্থ বাচ্চারা কোনো চিকিৎসাও পাচ্ছে না।’
কিন্তু এতকিছুর পরও মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি সহিংসতা বন্ধে বা সমস্যার সমাধান করতে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আন্তর্জাতিক মহল থেকে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান শুক্রবার রোহিঙ্গাদের ওপর এ হামলা গণহত্যার পর্যায়ে চলে গেছে উল্লেখ করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এই সাহায্যের জন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে কিনা তা পরিস্কার করে বলা হয়নি।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি