নিউজ ডেস্ক : জঙ্গলের কাঁটাঝোপে ভরা রুক্ষ পথে খালি পায়ে টানা তিন দিন হাঁটা, পিঠে এক ফালি কাপড়ে বাঁধা আট মাসের শিশু। খাবার বলতে গাছের পাতা আর পোকামাকড়। আর সম্বল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নোনা জল।
এভাবেই তিন দিন পরে নাফ নদীর পাড়ে পৌঁছে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বেগম বাহার। অন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতোই প্রাণ হাতে নিয়ে স্বামী ও শিশুপুত্রের সঙ্গে জন্মভূমি মায়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কক্স বাজারের শরণার্থী শিবিরে বসে মায়নামারের বীভত্স অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আতঙ্কে কেঁপে উঠছিলেন এই তরুণী।
যে মাঝি তাঁদের নাফ নদী পেরিয়ে নৌকা করে বাংলাদেশ নিয়ে আসেন, তিনি মাথা পিছু বাংলাদেশী মুদ্রায় ১০,০০০ টাকা দাবি করেন। অত টাকা তাঁদের সঙ্গে না থাকায় সঙ্গে যেটুকু যা দামি জিনিস ছিল সবই তাঁর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন বেগম বাহাররা। রাখাইনে ফেলে আসা বাড়ির কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসছিল তাঁর। তিনি বলেন, ‘রাখাইনেই আমার জন্ম, ওটাই আমার মাতৃভূমি। মা-কে কি কেউ ফেলে আসতে পারে? কিন্তু আমাদের কিছু করার ছিল না। প্রতি রাতে মায়ানমারের সেনা এসে গ্রামে তাণ্ডব চালাত। কারোর ঘরে সুন্দরী মেয়ে থাকলেই তাকে টেনে জঙ্গলে নিয়ে যেত তারা। যাদের ভাগ্য ভাল তাদের নির্যাতনের পর অর্ধমৃত অবস্থায় গ্রামের পথে ফেলে দিয়ে যেত। বাকিদের গলার নলি কেটে জঙ্গলেই ফেলে রিখ দিত।’
এর সঙ্গে রয়েছে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া আর নির্বিচার হত্যালীলা। শরণার্থী শিবিরের আর এক বাসিন্দা হামিদা খাতুন জানিয়েছেন কী ভাবে বাঁ হাতে গুলি নিয়ে জঙ্গল, নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন তাঁরা। অনেকে পায়ে হেঁটে জল, খাবার ছাড়াই জঙ্গল পেরনোর ধকলের পর নৌকাতেই মারা গিয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের হাই কনিশনের হিসেবে এখনও পর্যন্ত তিন লক্ষ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরোতে পেরেছেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস