জামায়াতের ৫৬১ প্রতিষ্ঠান কঠোর নজরদারিতে
ঢাকা: জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে আর্থিক, সেবামূলক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমিতি রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে বসে বিভিন্ন অপকর্মের ছক কষা হয়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও নজরদারিতে রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ের বিষয়ও তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেশে গত ৩৮ দিনে মুক্তমনা লেখক-ব্লগারদের ওপর হামলা; প্রকাশক, প্রকৌশলী, পুলিশ সদস্য, বিদেশি নাগরিকসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর নাম। বিভিন্ন সময় তাদের আস্তানা থেকে হামলার আলামতও উদ্ধার করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমন প্রেক্ষাপটেই গোয়েন্দাদের বাড়তি নজর ছিল জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। তাই সরকারের নির্দেশে দ্রুত মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে
৫৬১টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় বলে জানান এক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটাতে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী কাজ করছে। সারাদেশের জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এসব ঘটনার পরিকল্পনা ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন অপপ্রচার ছড়ানো হয় বলে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের আলোকে ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
২৯ অক্টোবর জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে পাঠানো আদেশে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ।
চার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবের কাছে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন নথিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নামে এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এনে তা নিজেদের সংগঠনের কাজে ব্যয় করার পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য করার কাজে ব্যবহার করছে।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন যে, শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জামায়াত-শিবিরপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সক্রিয়। জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমিতি থেকে সংগঠনের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি জঙ্গিদেরও অর্থায়ন করা হয়।
নজরদারির আওতায় আনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে_ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, মনোরোমা, রেনেসাঁ, ইসলামী ব্যাংক ক্রাফট অ্যান্ড ফ্যাশন, ইসলামী ব্যাংক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইসলামী ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামী ব্যাংক ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড ডিজ্যাবল রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, রেটিনা, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, কোরাল রিফ, মিশন ডেভেলপারস, কেয়ারি, ইনটিমেট হাউজিং, সোনারগাঁ হাউজিং, কেয়ারি গ্রুপ, কেয়ারি প্লাজা, কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস্, বিডি ফুড, ইয়ুথ গ্রুপ, মিশন গ্রুপ, আল-হামরা শপিং সেন্টার, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কো. লি., ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কো. লি., তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অনাবিল, সৌদিয়া, আবাবিল, ছালছাবিল, ফুয়াদ আল খতিব মেডিকেল ট্রাস্ট, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, সিএনসি, ফুলকুড়ি, স্পন্দন, ফোকাস, কংক্রিট, কনসেপ্ট, অ্যাক্সিলেন্ট, ওমেকা, অপটিমামসহ ৫৬১ প্রতিষ্ঠানের নাম।-সমকাল
০৬ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি