নিউজ ডেস্ক : রাজন, রাকিব, রবিউল ও আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগ হলো আরেকটি নাম, মো. সাগর। হ্যাঁ, বাকি তিনজনের মতো সাগরকেও নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে।
মো. সাগরের বয়স হয়েছিল মাত্র ১৬ বছর। দরিদ্র ফেরিওয়ালা বাবার সংসারে একটু সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য পরিত্যক্ত সামগ্রী কুড়িয়ে বিক্রি করত এই কিশোর। পানি তোলার কাজের মোটর চুরির অভিযোগ এনে এক হ্যাচারি মালিক ও তার সহযোগীরা সাগরকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
নির্যাতনকারীরা সাগরকে হত্যার পর তার লাশ একটি কাশবনের মধ্যে রেখে পালিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চরশ্রীরামপুর গ্রামে গত সোমবার এ ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।
শিশুর প্রতি এই নিষ্ঠুরতার ব্যাখ্যা কী? এর শেষইবা কোথায়? মারের চোটে সাগর নেতিয়ে পড়লেও মার থামেনি। পানি খেতে চেয়েছিল, তা-ও দেওয়া হয়নি। এরা কি মানুষ? কোনো বিচার-বিবেচনা, যুক্তি এদের মধ্যে কি কাজ করে না? খালি সন্দেহের বশবর্তী হয়ে একজনকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়?
২০১৫ সালের ৮ জুলাই মোবাইল ফোন চুরি করেছে—এই সন্দেহে সিলেটের শেখপাড়ায় কিশোর রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই বছরের ৩ আগস্ট খুলনায় গ্যারেজ থেকে চাকরি ছাড়ার অপরাধে শিশুশ্রমিক রাকিবকে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়।
একই বছর বরগুনার তালতলীতে মাছ চুরির অভিযোগ এনে রবিউল নামের এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে ঘুম থেকে দেরি করে ওঠার অপরাধে বেকারি কারখানার শিশুশ্রমিক আলাউদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করে বেকারির মালিকসহ আরও কয়েকজন। এ বছরের জানুয়ারি মাসে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে আতিক নামের এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করে তার চাচা। ফরিদপুরের মধুখালী পৌর এলাকায় না বলে বাবার পকেট থেকে ৩৫ টাকা নিয়েছিল ১০ বছর বয়সী হীরা। এই অপরাধে বাবা মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ রকম আরও ঘটেছে। ধারণা করা যায়, ভবিষ্যতে আরও ঘটবে। কারণ, এই শিশু হত্যাকারীদের কারও কোনো শাস্তি হয়নি।
সিলেটের রাজন ও খুলনার রাকিব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। রাজন হত্যা মামলায় প্রধান আসামিসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাতজনকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রাকিব হত্যা মামলায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু এই ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড আজও কার্যকর হয়নি। শাস্তির নজির স্থাপিত না হলে মানুষ শিশুহত্যা করতে ভয় পাবে কেন? ঘটনা খুব বেশি আলোচিত হলে বিচারের রায়ও আসে দ্রুত। না হলে স্বজনেরা চোখের জল ফেলতেই থাকেন।
অতএব হত্যাকাণ্ড হয়েই চলেছে। ভবিষ্যতেও হবে। রাজন, রাকিব, রবিউল, হীরা, সাগরদের নামের পাশে যোগ হবে আরও অনেক শিশুর নাম। এই জটিল পৃথিবীর জটিলতা বোঝার বয়স যাদের হয়নি, কোনো পঙ্কিলতা যাদের স্পর্শ করেনি, তাদের যদি এভাবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়, এর চেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা আর কী হতে পারে।
এই শিশু হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। শিশুহত্যা বন্ধ করতে এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, অবিলম্বে এসব শিশুহত্যার বিচার ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হোক। তা না হলে শিশুহত্যা থামানো যাবে না কিছুতেই।
রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক
এমটিনিউজ২৪/এম.জে