শনিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:২৩:১৫

আজ বিপ্লব ও সংহতি দিবস

আজ বিপ্লব ও সংহতি দিবস

নিউজ ডেস্ক : আজ শনিবার ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস। বর্তমান সরকারের আমলে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে এবার দিবসটি পালন করছে বিএনপি। তবুও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দিবসটি উপলক্ষে করে বিএনপির রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ অন্য সংগঠনগুলো দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের একটি অংশই ১৫ আগস্টে অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতি কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার একপর্যায়ে একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রূপ নিয়েছিল। এমনই এক প্রেক্ষাপটে মতাদর্শগত কোন্দলে আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ অংশ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি অংশ তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে। তাই জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দিনটিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। বাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সৈনিক-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে এসেছিলেন সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে। ৭ নভেম্বরের চেতনা তাই জাতীয় জীবনে প্রেরণার উৎস। ওই দিন সৈনিক-জনতা বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেন তাদের প্রিয় সেনাপতি জিয়াউর রহমানকে। বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেন, দেশ যখন অপশাসনে নিপতিত হয়, তখন গণতন্ত্র, স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল্যবোধ-অঙ্গীকার হুমকির সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশে এখন একটি বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত। তারা দমন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে জনগণের কণ্ঠরোধ করে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুই ক্ষমতায় থাকতে বিভোর হয়ে উঠেছে। এই দুঃশাসনের অবসান হওয়া জরুরি। জনগণ যদি অবাধে ভোট দেওয়ার অধিকারটুকু ফিরে পায়, তাহলেই তারা স্বৈরাচারী শাসনের বিপক্ষে তাদের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। এজন্য ৭ নভেম্বরের চেতনায় দেশের সব জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রক্তদান কর্মসূচি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি রয়েছে। গত ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করবে দলটি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে দলটি। ওইদিন সকাল ১০টায় রাজধানীর শেরে বাংলানগরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুস্পস্তাবক অর্পণ করবেন শীর্ষ নেতারা। এ সময় পবিত্র সূরা ফাতেহা পাঠ করবেন তারা। দিবসটির তাৎপর্য ব্যাখ্যায় বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করবে বিএনপি। এছাড়া সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালিত হবে। শুক্রবার দিবসটি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির আয়োজনে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের মানুষ মনে করেন স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর না হলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্নরকম হতে পারতো। এ জন্য যতদিন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ থাকবে, এর ইতিহাসে ৭ নভেম্বর একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে থাকবে। রুশ-ভারতের অক্ষশক্তির চক্রান্তের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যগণ গর্জে উঠেছিল সেদিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহি-জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্নের শেষ হয়। প্রতিহত হয় স্বাধীনতা ওসার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্র। এদিন সিপাহি-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে আনেন স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দী করে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা সাধারণ জনগণ ও সিপাহিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে বিশেষত সিপাহিদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে। দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তদন্তাধীন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বিপ্লব সম্পর্কে বলা হয় ‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। ৭ নভেম্বর ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি’। জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়ে তারা। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভুলে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।’ ০৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে