বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৪৯:৪৯

অগ্নিপরীক্ষায় আওয়ামী লীগ

অগ্নিপরীক্ষায় আওয়ামী লীগ

নিউজ ডেস্ক : আর মাত্র তিন মাস পর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। কিন্তু দলটি এখনো সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সবগুলো সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। পুরনো ৭৩টি (নতুন ৭৫) সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৫টিতে সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে আবার ১৮টিতে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সর্বস্ব কমিটি দিয়ে চলছে। দেড় বছর ধরে ৬ মাস আগে সম্মেলন হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ।

এসব বিষয় নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে অগি্নপরীক্ষায় পড়তে যাচ্ছেন দলের সাত সাংগঠনিক সম্পাদক। তাদের কেউ কেউ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ তো দূরের কথা, নিজ জেলাতেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, সাংগঠনিক সম্পাদকদের অধিকাংশের কাজে খুশি নন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাই শেষ সময়ে সফলতা দেখাতে না পারলে অনিবার্যভাবেই তাদের পদ হারাতে হবে।

সূত্রমতে, জেলায় জেলায় কর্মীর সঙ্গে নেতা, নেতার সঙ্গে এমপির কোন্দল বছরের পর বছর চলতে থাকলেও তা নিরসনের উদ্যোগ নেই। কয়েক দফা জেলা সফর, সদস্য সংখ্যা বাড়ানো এবং নবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা তা কার্যকর করতে পারেননি। ফলে অনেক নেতা-কর্মী মনঃক্ষুণ্ন হয়ে সংগঠনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। আবার অনেকে বেপরোয়া। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জেলা নেতারা জানিয়েছেন, অনেকেই ব্যস্ত দলীয় পদপদবি ব্যবহার করে আখের গোছাতে। সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। অনেক জেলায় দিবসভিত্তিক ছাড়া কোনো কর্মসূচিই পালন করা হয় না। অন্যদিকে জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু কিছু নেতার বিরুদ্ধে। তৃণমূলে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড ও বিতর্কদেরও কমিটির শীর্ষ পদে বসিয়েছেন তারা। জেলা-উপজেলার সংগঠনকে শক্তিশালী করতে না পারা এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতাসহ সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মোকাবিলা করতে হবে আগামী কাউন্সিলে।

জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া জেলা কমিটি জমা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ১৫ দিনের টাইম ফ্রেম দিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের। সম্মেলন না হওয়া জেলাগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করারও তাগাদা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন, যত বাধাই আসুক যথা সময়েই সম্মেলন হবে, এ জন্য প্রস্তুতি নিন। আওয়ামী লীগের বিগত কয়েকটি সম্মেলন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে।

মোহাম্মদ নাসিম যখন একক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, তখনো পরিবর্তন এসেছিল। এর ধারাবাহিকতা ছিল তার পরের কমিটিতেও। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করা সাবের হোসেন চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আবদুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না, বীর বাহাদুর একসঙ্গে দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও খালিদ মাহমুদ সাংগঠনিক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানককে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হলে বীর বাহাদুরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এই সাত সাংগঠনিক দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পান। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা কেউ কেউ জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কয়েক দফা উদ্যোগ গ্রহণের পর এ যাবত ৫৫টি জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যায়নি। এটা সাংগঠনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন কেউ কেউ। এ কারণেই ঝড়টা যাবে সাংগঠনিক সম্পাদকদের ওপর থেকেই। তরুণ এসব নেতাদের কাউকেই প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতা। তবে এক থেকে দুজনকে পদোন্নতি দেওয়া হলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই।

সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের সম্মেলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০১২ সালের সম্মেলনে কিছু নেতার পদবিতে রদবদল আর কয়েকজন নতুন মুখ সংযোজন হলেও এবার বড় ধরনের রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের কারও কারও বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে পদ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এমন দুর্নীতি, অপকর্ম, অপরাধ ও পদবাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে যেসব নেতার নামে তাদের কপাল পোড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চুলচেরা বিশ্লেষণে এ কমিটিতে স্থান পাবেন দলের ত্যাগী নেতারা-এমন ধারণা নেতা-কর্মীদের। বাদ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সাংগঠনিকভাবে চরম ব্যর্থ অনেক কেন্দ্রীয় নেতার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদকদের দক্ষতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন।

সূত্র আরও জানায়, জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত কয়েকটি বলয়ে বন্দী। এসব বলয়ের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলার প্রবীণ নেতাদের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকরা অনেকেই কিছু করতে পারেননি। মূলত কাগুজে দায়িত্বে পালন করেছেন তারা। দলটির সাত বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৯টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে একটি, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টির মধ্যে চারটি, ঢাকা বিভাগের ২১টির মধ্যে ১১টি, বরিশাল বিভাগের ৭টির মধ্যে তিনটি, সিলেট বিভাগের একটি ও খুলনা বিভাগের একটি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন এখনো হয়নি। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, ২১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১২টিতে সম্মেলন হয়েছে। দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে, বাকিগুলোর কমিটি নভেম্বরেই সম্পন্ন হবে। সম্মেলন না হওয়া জেলাগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্মেলন হবে।

বরিশাল বিভাগের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এই প্রতিবেদককে বলেন, তার বিভাগে তিনটি জেলায় সম্মেলন বাকি থাকলেও পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এ দুটি জেলা সম্মেলন শেষ হলেই ভোলা জেলার সম্মেলন হবে।

রংপুর বিভাগের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রংপুর বিভাগের নয় জেলার মধ্যে আটটিতেই সম্মেলন হয়ে গেছে। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে। কোরবানির ঈদের পরই গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে।

খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, জেলা সম্মেলন শেষের দিকে। এখন চলছে কমিটি গঠনের কাজ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলায় জমা দেওয়া হবে।

রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, রাজশাহী বিভাগের ৯টি সাংগঠনিক জেলার প্রত্যেকটিতেই সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন জেলাগুলো থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য তালিকা আসা শুরু হয়ে হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা অনুমোদন করবেন। স্বপন আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলনের আগে সবগুলো জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হবে।-বিডিপ্রতিদিন
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে