বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৩৩:২৪

ভারত থেকে ডিজেল আমদানি, অক্টোবরে হতে পারে চুক্তি

ভারত থেকে ডিজেল আমদানি, অক্টোবরে হতে পারে চুক্তি

কাওসার আজম : প্রতিবেশী দেশ ভারতের আসাম থেকে বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আগামী অক্টোবরে আসামের নুমলীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) ও বিপিসির মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ উপলক্ষ্যে বিপিসির কর্মকর্তারা আসামের গোয়াহাটিতে যাচ্ছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এনআরএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি. পদ্মনভন। তার উদ্ধৃতি দিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আসাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক অসমীয়া প্রতিদিনে গত ১১ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে।

তবে বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা প্রতিবেদককে বলেন, চুক্তির বিষয়ে এখনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে, জ্বালানী সচিব আবু বকর সিদ্দিক এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

পি পদ্মনভনের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, নুমলীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে তেল আমদানিতে অক্টোবরেই চুক্তি হচ্ছে। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, এনআরএল-এর শিলিগুড়ি ও পশ্চিমবঙ্গের বিপণন টার্মিনাল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ইন্দো-বাংলা ‘ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’-এর মাধ্যমে বছরে ১০ লাখ টন পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ বিপিসির দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে আমদানি করা হবে।

‘অক্টোবরে’ চুক্তি : এনআরএল-এর ঘোষণা-চলতি বছরে বাংলাদেশে রফতানি হবে নুমলীগড়ের তেল দৈনিক অসমীয়া প্রতিদিনের লিড নিউজ ছিল ১১ সেপ্টেম্বর। এ খবরেও এনআরএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি পদ্মনভনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’-এর মাধ্যমে সরাসরি বছরে ১০ লাখ টন পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ বাংলাদেশের পার্বতীপুরের ডিপোতে রফতানি করবে এনআরএল। আগামী অক্টোবরে বিপিসির প্রতিনিধি দল গোয়াহাটিতে গিয়ে এ চুক্তিতে সই করবেন।

এ ব্যাপারে জ্বালানী বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক প্রতিবেদককে বলেন, ‘নুমলীগড় থেকে পারবর্তীপুর পর্যন্ত পাইপ লাইন তৈরী করা হচ্ছে। পাইপ লাইন তৈরী হলেই সেখান থেকে ডিজেল আমদানি করা হবে।’

অক্টোবরে ভারতীয় রিফাইনারি কোম্পানি এনআরএল-এর সঙ্গে বিপিসির চুক্তির বিষয়টি তার জানা নেই উল্লেখ করে জ্বালানি সচিব বলেন, নুমলীগড় থেকে পারবর্তীপুর পর্যন্ত পাইপলাইন দিয়ে শুধুমাত্র ডিজেল আমদানির জন্য গত এপ্রিল মাসে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে। সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে। তবে অক্টোবরেই এ বিষয়ে চুক্তি হচ্ছে কিনা তা জানা নেই। এটা বিপিসির চেয়ারম্যান ভাল বলতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে আসাম থেকে ডিজেল আমদানি করলে খরচ কম পড়বে। পরিবহন খরচ লাগবে না। ওরা (এনআরএল) যে পরিমাণ ডিজেল আমাদের ডিপোতে পৌঁছাবে— সে পরিমাণের বিলই তারা পাবে। লোকসানটা (সঞ্চালন ঘাটতি) তাদেরই থাকবে।

এর আগেও হিন্দুস্তান অয়েল কোম্পানি আমাদের তেল দিত। পরে তা বন্ধ হয়ে গেছে। যোগ করেন আবু বকর সিদ্দিক।

এ ব্যাপারে বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা এই প্রতিবেদককে বলেন, ডিজেল আমদানির জন্য এখন পর্যন্ত কোনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। অক্টোবরে চুক্তিতে স্বাক্ষর হবে এ ধরনের কোনো কিছু আমার জানা মতে ঠিক হয়নি। আমাদের তারা কিছু জানায়নি।

‘কবে হবে’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এক সাইড থেকে বলতে পারছি না। দুই পক্ষ মিলেই এটা ঠিক হবে।

‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’-এর কাজ প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান বিপিসি চেয়ারম্যান।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে বছরে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৩৩ লাখ টন। এ পরিমাণ ডিজেল মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বিপিসি।

জ্বালানী বিভাগ ও বিপিসি সূত্রে জানা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যে অবস্থিত নুমলীগড় রিফাইনারি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানী তেল সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। পাইপলাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ২০১৩ সালের ১৫ মে বাংলাদেশের তিন সদস্যের এবং নুমলীগড় রিফাইনারি লিমিটেডের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল যৌথভাবে সমীক্ষা পরিচালনা করে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত পাইপলাইন ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার ও ভারতের অংশে পাঁচ কিলোমিটার। বর্তমানে এই পাইপ লাইনের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলে প্রতি বছর বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম এবং খুলনা থেকে ডিজেল পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হয়। ডিজেল সঙ্কটের জন্য যাতে চাষাবাদ বিঘ্নিত না হয়। এ জন্যই বিকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। পাইপ লাইনটি হলে দেশের উত্তরাঞ্চলে সেচ মৌসুমে ডিজেল পরিবহনের ঝামেলা কমে আসবে। সাশ্রয় হবে বছরে প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে ভারত থেকে সর্বশেষ জ্বালানী তেল আমদানি করে বাংলাদেশ। ওই সময় নৌপথে ভারতের আসামের শিলঘাট থেকে বাংলাদেশের বাঘাবাড়ী ডিপোতে জ্বালানী তেল পরিবহন করা হতো। তেলের একেকটি চালান বাংলাদেশে পৌঁছাতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগত। এক্ষেত্রে আসাম সীমান্তে যাতায়াতে বাংলাদেশী নাবিকদের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জটিলতার কারণে নৌপথে ভারত থেকে জ্বালানী তেল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।-দ্য রিপোর্ট
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে