নিউজ ডেস্ক: 'যানজট বন্ধে নতুন আবিষ্কার, অভাবনীয় তামাশা, কতোদিন আগে শুনলাম বিজিএমএই ভবন ভাঙা নিয়ে কতো পরিকল্পনা, এখনো সে বহাল তবিয়তে আকাশ ছুঁয়ে আছে। কিন্তু রিকশাওয়ালা ভাই তোমাদের দোষ ক্ষমার অযোগ্য, ৫০-৬০০০০ টাকা ধার করে এটা কিনে অভাব থেকে মুক্তি চেয়েছো কেন? এখন রিকশা এখানে রেখে, ঋণ শোধ করো আগে।
আর না কেঁদে বুলডোজার এর নিচে তোমার মাথাও দিয়ে দাওনা.....'
কথাগুলো আক্ষেপ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ওপরের ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। একই সাথে আক্ষেপ করছেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা।
বুধবার শহরের সাতমাথায় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১৭টি অটোরিকশা আটকের পর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পৌর মেয়র মাহবুবর রহমানের উপস্থিতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) মোহাম্মদ হালিমুন রাজীব।
এ অভিযানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত চালকেরা প্রশ্ন তোলেন, শহরের বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রিকশা কেনাবেচা হলেও সেখানে অভিযান না দিয়ে শুধু চালকদের কাছ থেকে রিকশা জব্দ করে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থ রিকশা চালকেরাই নন, সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীকারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন দোষটা আসলে কার? একটা রিকশা এভাবে বুলডোজার দিয়ে 'ক্র্যাশ' করে দেওয়া হবে কেন? এমন প্রশ্নে জর্জরিত সকলের পোস্ট।
একজন লিখেছেন, ঢাকা শহরের অনেক গাড়ি উলটো পথে যায়, অনেক সমস্যা থাকে, কই তাদের গাড়ি তো এভাবে পিষ্ট করতে দেখি নাই! আমি এমন অনেক দেখেছি রিকশাওয়ালাদের লাঠি দিয়ে মারতে, গালাগালি করতে! ঠিক আছে,তার গায়ে হাত তো তুলাই যায়!হাজার হোক রিকশাওয়ালা। এ তাহলে কেমন আইন? এই আইনে এতো ভেদাভেদ কেন?
উল্লেখ্য যে, বগুড়া শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের দ্বিতীয় দিন ‘গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার’ দিকে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিক্রয়কেন্দ্রে (শোরুম) অভিযান চালানো হয়েছে।
বগুড়ার নির্বাহী হাকিম ফারহানাজের নেতৃত্বে শহরের সূত্রাপুর এলাকার গোহাইল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সাতটি বিক্রয়কেন্দ্রে এ অভিযান চালানো হয়।
তবে অভিযানের খবর পেয়ে বিক্রয়কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে আগেই সটকে পড়েন মালিকেরা। পরে নির্বাহী হাকিমের নির্দেশে তালাবদ্ধ সাতটি বিক্রয়কেন্দ্র সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এর আগে জেলা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার শহরের সাতমাথায় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১৭টি অটোরিকশা আটকের পর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
পৌর মেয়র মাহবুবর রহমানের উপস্থিতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) মোহাম্মদ হালিমুন রাজীব।
এ অভিযানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত চালকেরা প্রশ্ন তোলেন, শহরের বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রিকশা কেনাবেচা হলেও সেখানে অভিযান না দিয়ে শুধু চালকদের কাছ থেকে রিকশা জব্দ করে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে যখন বুলডোজার দিয়ে রিকশা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল এ দৃশ্য দেখে তখন পাশে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন চালকেরা। এসব চালকের বেশির ভাগই সংসার চালানোর অবলম্বন ছিল এই রিকশা। অনেকে ধারদেনা করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে রিকশা কেনেন। তাঁরা এসব গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় অনেক কাকুতিমিনতি করে সেগুলো না ভেঙে ফেলার জন্য।
গতকাল রিকশা ভেঙে ফেলার পর সমালোচনার মুখে এ অভিযান। তবে অভিযানে অংশ নেওয়া বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, অবৈধভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা কেনাবেচায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে চালানো এ অভিযানের খবর পেয়ে দোকানে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েন বিক্রেতারা।
পরে নির্বাহী হাকিমের নির্দেশে সাতটি বিক্রয় কেন্দ্র সিলগালা করে দেওয়া হয়। অভিযানে সিলগালা করে দেওয়া সাতটি প্রতিষ্ঠান হলো গোহাইল সড়কের জিহাদ অটো সেন্টার, বিকল্প বাইক সেন্টার, ফাহিম অটো হাউস, অটো হাউস, নিউ সেবা মোটরস, অটো পয়েন্ট ও বগুড়া অটো সেন্টার।
বুধবারের সাতমাথার ওই অভিযানের আগে কয়েক দিনের অভিযানে আরও ৩০০ রিকশা জব্দ করা হয়েছে বলে জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক বিকর্ণ কুমার চৌধুরী জানান।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বিক্রির সঙ্গে জড়িত শহরের গোহাইল সড়কের একটি বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রফিক বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি, বিক্রয় ও চালানোর সঙ্গে বহু মানুষের জীবনজীবিকা জড়িত। এই রিকশা শহরে চলাচল ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে অনেক মানুষ পথে বসবে।
৬ অক্টোবর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর