রবিবার, ০৮ অক্টোবর, ২০১৭, ০৩:০৯:৩০

আবারও খোঁজ মিললো ‘ব্লু হোয়েল’ আসক্ত আরও ২ কিশোরের

আবারও খোঁজ মিললো ‘ব্লু হোয়েল’ আসক্ত আরও ২ কিশোরের

নিউজ ডেস্ক : মরণ ফাঁদ ‘ব্লু হোয়েল’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশে ‘ব্লু হোয়েলে’  আবারও খোঁজ মিললো ‘ব্লু হোয়েল’ আসক্ত আরও ২ কিশোরের।

শনিবার “মরণ ফাঁদ ‘ব্লু হোয়েল’, যেভাবে বাঁচাবেন আপনার সন্তানকে” শিরোনামে একটি সংবাদ জাতীয় একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর ওই দুই কিশোরের খোঁজ মিলে বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম।

তাজুল ইসলাম বলেন, ওই সংবাদে ‘ব্লু হোয়েলে’ আসক্তদের লক্ষণ উল্লেখ ছিল। সংবাদটি আমি আমার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করার পর দুইজন অভিভাবক আমাকে মেসেঞ্জারে ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা খুবই গুরুতর।

তিনি আরও জানান, সংবাদটি দেখে এক কিশোরের ভাই আমাকে তার ছোট ভাইয়ের হাতের ছবি মেসেঞ্জারে পাঠিয়েছে যা ‘ব্লু হোয়েল’ আসক্তদের উপসর্গের সঙ্গে মিলে গেছে। তার বড় ভাই তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে অপর কিশোর চিকিৎসকের কাছে যেতে অপারগতা জানিয়েছে বলেও জানান তাজুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ঢাকার নিউ মার্কেট থানা এলাকার অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা নামের ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী এই গেমে আসক্ত হয়ে আত্মহত্যা করে।
অনলাইন সুইসাইড গেম ‘ব্লু হোয়েল’। এই গেমের ৫০টি ধাপ। সর্বশেষ পরিণতি আত্মহত্যা।

লেভেল ও টাস্কগুলো ভয়ঙ্কর। গেম যত এগোবে টাস্ক তত ভয়ঙ্কর হতে থাকবে। প্রথমদিকের টাস্কগুলো মজার হওয়ায় সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে কিশোর-কিশোরীরা। কেউ খেলায় ইচ্ছুক হলে তার কাছে পৌঁছে যায় নির্দেশাবলী। সেইমতো নির্দেশ বা চ্যালেঞ্জ-গুল একে একে পূরণ করে তার ছবি পাঠাতে হয় গেম হ্যান্ডলারকে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় এই প্রাণঘাতী গেম। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু’বছর পরে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে যেন আত্মহত্যার জন্যই। সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি’।

প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা। তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি। একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়। চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে।

গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ঙ্কর হতে থাকে টাস্কগুলো। এই টাস্কগুলোতে অংশগ্রহণের পর সেই ছবি পোস্ট করতে হয় এর গেমিং পেজে। প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ৫০তম টাস্কের শর্তই হলো আত্মহনন।

ফিলিপ বুদেকিন নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত রাশিয়ার এক মনোবিজ্ঞানের ছাত্র দাবি করে সেই এই গেমের আবিষ্কর্তা। রাশিয়ায় অন্তত ১৬ জন কিশোর-কিশোরী এই গেমে অংশ নিয়ে আত্মহত্যা করার পরে বুদেকিনকে গ্রেফতার করা হয়।

বুদেকিন তার দোষ স্বীকার করে নিয়ে বলেছে, যেসব ছেলেমেয়ের সমাজে কোনো দামই নেই, তাদেরকেই সে আত্মহত্যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে ‘সাফ’ করতে চেয়েছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কয়েকশ’ কিশোর-কিশোরী এই গেম খেলতে গিয়ে ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছে। ভারতেও মারা গেছে বেশ কয়েকজন। শেষ পর্যন্ত এটা হানা দিয়েছে বাংলাদেশেও।

কেন এ ধরনের ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে ওঠে কিশোর-কিশোরীরা? মনোবিদরা বলছেন, ‘ওই বয়সটা এমন যে তখন একটা ডেয়ার-ডেভিল কিছু করে দেখানোর ইচ্ছেটা প্রবল হয়। তবে যারা এরকম গেম বেছে নিচ্ছে, তাদের মনে হতাশা, আত্মমর্যাদার অভাব, মনোকষ্ট- এগুলো থাকেই। সেজন্যই তারা এমন একটা কিছু করে দেখাতে যায়, যাতে লোকে তাদের অকুতোভয় বলে মনে করবে। ’

অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের খোঁজে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে ব্লুহোয়েলচ্যালেঞ্জ কিংবা আইঅ্যামহোয়েল লিখে পোস্ট করলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নেয়। মাঝপথে কেউ খেলা ছাড়তে চাইলে তাকে ব্ল্যাকমেল করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এমনকি প্রিয়জনদের ক্ষতি করার হুমকি দেয় তারা।

এই গেমিং অ্যাপ মোবাইলে একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে তা আর কোনোভাবেই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, ওই মোবাইলে ক্রমাগত নোটিফিকেশন আসতে থাকে যা ওই মোবাইলের ইউজারকে এই গেম খেলতে বাধ্য করে।

এমটিনিউজ২৪/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে