মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ০৮:৪৮:২২

গাড়ি কিনতে সুদবিহীন ৩০ লাখ টাকা ঋণ দিবে সরকার

গাড়ি কিনতে সুদবিহীন ৩০ লাখ টাকা ঋণ দিবে সরকার

নিউজ ডেস্ক : গাড়ি কেনার জন্য সুদবিহীন এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে ঋণ দেবে সরকার। সেইসাথে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, তেল খরচ ও চালকের বেতনবাবদ সরকার তাঁদের আরও দেবে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে। গাড়ি কেনার ঋণ পরিশোধের আগে সরকারের অনুমতি নিয়ে তা বিক্রিও করতে পারবেন।

তবে এই সুবিধা পাবে শুধুমাত্র প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব এবং তাঁদের সমমর্যাদার কর্মকর্তারা।

কোনো প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে গাড়ির সুবিধা পেলেও ঋণের জন্য তিনি আবেদন করতে পারবেন। তবে ঋণের টাকায় গাড়ি কেনার পর অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা তাঁর বাতিল হয়ে যাবে।

গাড়ির অগ্নিকাণ্ড, চুরি ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির জন্য ‘ফার্স্ট পার্টি’ বিমা করতে হবে। ঋণের কিস্তি পরিশোধ হওয়ার পর কর্মকর্তা গাড়ির মালিক হয়ে যাবেন। সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এক বছরের অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকার সময়ও মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন, এর নিচের কর্মকর্তারা তা পাবেন না।

ঋণের অর্থ সর্বোচ্চ ১২০টি সমান কিস্তিতে, অর্থাৎ ১০ বছরের মধ্যে আদায়যোগ্য। ৩০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে মাসিক কিস্তি দাঁড়ায় ২৫ হাজার টাকা। ঋণ নেওয়ার পর প্রতি মাসের বেতন থেকে সরকার কিস্তির টাকা কেটে রাখবে। কোনো কর্মকর্তা চাইলে এককালীন পরিশোধও করতে পারবেন। চাকরির মেয়াদকালে সব টাকা আদায় না হলে সরকার তা কেটে রাখবে কর্মকর্তাদের গ্র্যাচুইটি বা পেনশনের টাকা থেকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের স্বার্থে তিনটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে জারি করা তিনটি প্রজ্ঞাপন কার্যকর হচ্ছে গত জুলাই থেকে। পুরো বিষয়টিতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সম্মতি রয়েছে। সুবিধাগুলো দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অবশ্য গত জুন মাস থেকে। সম্প্রতি গাড়ি কেনার ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

গত জুনে উপসচিবদেরও অন্তত গাড়ি ব্যবহারের দিক থেকে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘোষণা করে সরকার। এরপর গত ২৫ আগস্ট ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০১৭ (সংশোধিত)’ নামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এক মাস পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর আবার তা সংশোধন করে। সংশোধনের তিন দিন পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর একই মন্ত্রণালয় একই বিষয়ে আবার জারি করে দুটি প্রজ্ঞাপন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণ পেতে হলে সরকারি কর্মকর্তাকে আগে সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হতে হবে। ঋণ মঞ্জুরির আদেশ জারির পর থেকে অন্তত এক বছর ওই কর্মকর্তার চাকরি থাকতে হবে। চাকরিজীবনে একবারই তিনি এই ঋণ পাবেন। গাড়ি কেনার জন্য অগ্রিম চেক নিয়ে যাওয়ার পর তিনি তা প্রত্যাহার করতে পারবেন না।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, সরকারি কাজে দাপ্তরিক এলাকার ৮ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়ি ব্যবহারের জন্য কেউ কোনো ভ্রমণ ভাতা ও খাওয়াদাওয়া (টিএ, ডিএ) খরচ পাবেন না। সরকারি কাজে এর বাইরে গেলে নিয়মানুযায়ী টিএ, ডিএ পাবেন। দাপ্তরিক কাজ মেটানোর পর ব্যক্তিগত কাজে পরিবারের সদস্যরাও গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে টিএ, ডিএর বিষয় প্রযোজ্য হবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রশাসনে ১ হাজার ৫৫২ জন উপসচিব রয়েছেন। তাঁরা সরকারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা ৩ হাজারের বেশি হলেও সবাই গাড়ি কেনার ঋণ পাবেন না। শুধু উপসচিবদের গাড়ি কেনার ঋণ দিতেই সরকারের ব্যয় হবে ৪৬৫ কোটি টাকা। চালকদের বেতনসহ অন্য সব খরচ মিলিয়ে উপসচিবদের জন্যই সরকারকে আরও ব্যয় করতে হবে বছরে ৯৩ কোটি টাকা। মাসে ৫০ হাজার টাকা করে হিসাব করলে ১০ বছরে প্রত্যেকের জন্য সরকারের খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইকোনমিকসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে সরকারের এই নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের উপপ্রধান এবং আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগের উপসচিবদের গাড়ি কেনার টাকা পাওয়ার সুযোগ থেকে পুরোপুরিই বাদ দেওয়া হয়েছে।

নীতিমালায় ইকোনমিক ক্যাডারের যুগ্ম প্রধান বা তাঁর ওপরের কর্মকর্তা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব থেকে তাঁর ওপরের কর্মকর্তাদের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে