নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগসহ বর্বর নির্যাতনের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি। দুই সফরে আগামী ১৫ অক্টোবর রোববার আহমদ জাহিদ হামিদির ঢাকা সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্রে জানাগেছে, মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ১৫ অক্টোবর রোববার সকালে একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হবেন।
সূত্রটি জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের শেষে ঢাকায় ফিরে ওই দিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হবেন আহমদ জাহিদ হামিদি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে তার।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথম থেকেই সরব মালয়েশিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতি দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ একা নয়। নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ সরকারের পাশে রয়েছে মালয়েশিয়া।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এদিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলার সময় এখনও হয়নি বলে জানান সংস্থাটির মুখপাত্র। জাতিসংঘ আরও জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।
অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২১৪টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।
১৪ অক্টোবর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর