শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ০৫:০৫:৩২

এটা কতটা শোভনীয়? তিনি শুধু শিক্ষিকাই নন, একজন মাও

এটা কতটা শোভনীয়? তিনি শুধু শিক্ষিকাই নন, একজন মাও

নিউজ ডেস্ক : একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষিকার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বুধবার ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীর মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালীন সময় টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন শিক্ষিকা দিপ্তি রানী বিশ্বাস।

ওই স্কুলে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন পরিদর্শনে গেলে তিনি এ দৃশ্য দেখতে পান। প্রায় ৮-১০ মিনিট পর্যন্ত উপজেলা চেয়ারম্যান পরীক্ষার হলে অবস্থান করার পর শিক্ষিকার ঘুম ভাঙে।

যদিও দিপ্তি রানী বিশ্বাসের স্বামী সুবিনয় মল্লিক জানান, তার স্ত্রী অসুস্থ ছিল, তারপরও স্কুলে গেছেন। তাই এমনটা হয়েছে। এদিকে পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষিকার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমের ছবি ফেসবুকে মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় এমন দায়িত্বহীন কাজের সমালোচনা।

সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড অনুযায়ী গত দুইদিন ধরে ওই শিক্ষির সমালোচনা চলছিল। অনেকেই বুঝে না বুঝে ছবিও শেয়ার করে শিক্ষিকার দোষ ত্রুটি খুঁজে দেখছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যানকে বাহবাও দিয়েছেন অনেকে।

তবে, ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টিকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিতে নারাজ। 'একজন শিক্ষিকা তার দায়িত্বে অবহেলা করলে তার ছবি কেন এইভাবে তোলা হবে? আর কেনইবা এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাবে? এটা কতটা শোভনীয়?' এমনটা প্রশ্ন রেখেছেন অনেকেই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিক হায়দার আলী লিখেছেন, টেবিলের উপর মাথাটা রেখে ঘুমিয়ে আছেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। শুধু শিক্ষিকাই নয় তিনি একজন মমতাময়ী মা। অনেকেই অনেক মন্তব্য করছেন-উনার অপরাধ তিনি স্কুলের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সামনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর সেই দৃশ্য গিয়ে দেখে এবং ছবি তুলতে পেরে যেন তিনি বিশ্ব জয় করে ফেলেছেন স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান। আর সেই ছবি ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে ক্লাসে ঘুমানোর আপরাধে সেই শিক্ষিকার সমালোচনা করছি অনেকেই।

তিনি লিখেছেন, একবারও ভাবছি না তিনি একজন মানুষ। একজন মা কিংবা শিক্ষিকা। তিনি কি হটাৎ অসুস্থ হতে পারে না? কিংবা সেই আর সেই অসুস্থ শরীর নিয়ে স্কুলে আসার পর টেবিলে ঘুমিয়ে পড়াটা কি কোন অসম্ভব কোন কিছু? এমনও তো হতে পারে কিছুটা অসুস্থ শরীর নিয়ে স্কুলের ক্লাসে যাওয়ার পর আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তো আর ইট পাথরের কোন রোবট নয়। আমি নিজেও কয়েকবার ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের অফিসের টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছি।

হাসানুল হক অরণ্য নামের একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'একদিকে সংসার ধর্ম অন্যদিকে আর্থিক স্বচ্ছলতার একটু নিরন্তন প্রয়াস, দুয়ে মিলে রক্ত মাংসে গড়া শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। সব মিলে পুরো আসমান যখন মাথার ওপর তখন শরীর আর কিছু নিতে চায় না। ঘুম নামক বস্তুটা বুঝতে পেরেছে যান্ত্রিক অভিনয় করা শরীরটা আসলে যান্ত্রিক নয় তাই সুযোগ বুঝে চেপে ধরেছে। কর্তব্যের দেয়াল অনেক মজবুত তাই নরম বিছানার সুখ চাইলেই স্পর্শ করা যায় না। আর একারণেই হয়তো কিছুক্ষণের জন্য মাথাটা একটুকরো শক্ত কাঠের প্রেমে পড়েছিল। তবে সেটা ভুল ছিল না, পুনরায় উদ্দীপনা নিয়ে আবার সংগ্রামে নামার পূর্ব প্রস্তুতি।'

গণমাধ্যমকর্মী ইকবাল মাহমুদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের জানা উচিত, দলবল নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তিনি সেটি লঙ্ঘন করেছেন। আর একজন নারীর অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তোলা ও তা অনলাইনে ছাড়ার মত ভয়ংকর অপরাধ করেও তিনি এখনও গ্রেফতার হননি, এটাই বিস্ময়।’

জকিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিজ মিয়া বলেন, কোনো শিক্ষক অনিয়ম করলে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেয়া হয়। এভাবে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করার পরও তার কোন মন্তব্য পাওয়ায় সম্ভব হয়নি।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে