নিউজ ডেস্ক : সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে বন্দি থাকা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছিলেন ওই সময়কার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী।
তিনি এ জন্য তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদকে চাপ দিয়েছিলেন। এসব বিষয়ে ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস ১৯৯৬-২০১২ বইতে খোলামেলা লিখেছেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী।
সেখানকার কিছু অংশ তুলে ধরেছে ইন্ডিয়া টুডে। এ অংশের শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ‘রেসকিউইং বাংলাদেশজ টু বেগমস’। অর্থাৎ বাংলাদেশের দুই নেত্রীকে উদ্ধার পর্ব।
এতে প্রণব মুখার্জী যা লিখেছেন তা নিচে তুলে ধরা হলো:
(২০০৭ সালের জানুয়ারিতে) জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের (তৎকালীন) প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ জরুরি অবস্থা জারি করেন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে তিনি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন।
এ সময়ে বেশির ভাগ প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতা ছিলেন কারাগারে। জেলে ছিলেন শেখ হাসিনাও। এ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে ভারত। এর মধ্য দিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরি।
২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি। তখন বাংলাদেশে সেনাপ্রধান মইন-উ-আহমদ। তিনি ৬ দিনের ভারত সফরে এলেন। আমার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করলেন তিনি। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আমি তাকে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরলাম।
কিন্তু ক্ষমতায় গেলে তাকে বরখাস্ত করতে পারেন শেখ হাসিনা, এ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন তিনি। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিলাম। হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ওই জেনারেলকে পদ টিকিয়ে রাখার নিশ্চয়তা দিলাম। এ ছাড়া আমি যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইলাম।
উদ্দেশ্য, তাকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ করা, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়ের মুক্তি নিশ্চিত করা। আমি তখনকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণনের মাধ্যমে আমার হস্তক্ষেপে সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি নিশ্চিত করলাম এবং দেশটিতে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনলাম। বেশ কয়েক বছর পর, জেনারেল মইনের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার পথ সহজ করে দিই, তখন তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন।
শেখ হাসিনা (আমার) ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু। যখন আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম তখন ভারত তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার মাধ্যমে।
যখন তিনি জেলে ছিলেন এবং তাকে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা ত্যাগ করেছিলেন, আমি তাদেরকে তাদের অবস্থানে ফিরে যেতে তাগিদ দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, তাদের কর্মকাণ্ড অনৈতিক। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হলো।
সেই নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হলেন শেখ হাসিনা। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী।
এমটিনিউজ/এসএস