শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ০১:৪০:২৪

উত্তাল বঙ্গোপসাগর, বৃষ্টিতে সারা দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত

উত্তাল বঙ্গোপসাগর, বৃষ্টিতে সারা দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত

নিউজ ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সারা দেশে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ বর্ষণ শুরু হয়ে অব্যাহত থাকে গতকাল দিনভর। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নানা পেশার মানুষ।

আবহাওয়া অফিস আজও বর্ষণের আভাস দিয়েছে। এদিকে ভারি এবং মাঝারি বর্ষণে বিভিন্ন স্থানের বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামবাসী পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

বরিশাল : গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট সঞ্চালনশীল  মেঘমালার কারণে গতকাল দিনভর বরিশালসহ পুরো উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে হালকা এবং ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহে ২ নম্বর এবং সমুদ্রবন্দরসমূহে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টার পর থেকে ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটর বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। এ অবস্থায় নগরীসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বেড়েছে।

উপকূলীয় এলাকায় দ্বীপ এবং চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দুই ফুটের অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার মুখে রয়েছে। অসময়ে বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পরিবহন সংকটে পড়েন সাধারণ মানুষ।

বরগুনা : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ভারি বর্ষণ ও অমাবস্যার জোয়ারের পানির প্রভাবে বরগুনা অঞ্চলে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে জোয়ারের পানি।

জোয়ারের চাপে বরগুনা সদরসহ তালতলী, বেতাগী ও পাথরঘাটা উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম, পৌর শহরসহ উপকূলের নিম্নাঞ্চল। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে লবণ পানিতে নষ্ট  হয়েছে ফসলি জমি। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে মাছের ঘের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অমাবস্যার জোয়ারের পানি ৩ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও জেলায় ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৭ মিলিমিটার। সাগর উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর থেকে সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। চাঁদপুর : চাঁদপুরে বৃষ্টি হচ্ছে বৃহস্পতিবার রাত থেকে। আবহাওয়া অফিস গতকাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ মিলিমিটার রেকর্ড করেছে। তবে লঞ্চসহ সব যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বাগেরহাট : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজের পণ্য খালাস ও বোঝাই।

বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, মোংলা বন্দরে একটি ক্লিঙ্কার (সিমেন্টের কাঁচামাল), তিনটি সার, চারটি চাল, একটি মেশিনারি এবং একটি সারবাহী জাহাজ অবস্থান করছে। আরও তিনটি জাহাজ পণ্য নিয়ে বন্দরে ভেড়ার শিডিউল রয়েছে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এসব জাহাজে পণ্য খালাস ও বোঝাই ব্যাহত হচ্ছে।   

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়া, পদ্মার তীব্র স্রোত এবং ঘূর্ণায়মান ঢেউয়ের কারণে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে যানবাহন পারাপারের জন্য ৭টি ফেরি চলাচল করছে।

পটুয়াখালী : অমাবস্যার প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং উপচে অন্তত ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে অবিরাম ভারি ও মাঝারি বৃষ্টি আর জোয়ারের ফলে এ গ্রামগুলোর হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। থমকে গেছে জনজীবন। নিম্নচাপের ফলে সাগর উত্তাল রয়েছে।

গভীর সাগরে মাছ ধরা ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে পায়রা বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আর নদীবন্দরকে ২ নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাই অভ্যন্তরীণ নৌরুটে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া ও পশরবুনিয়া পয়েন্টে অরক্ষিত বেড়িবাঁধ দিয়ে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। আর ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের রমজানপুর পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে লোকজন দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে, যাতে বাঁধটি ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকতে না পারে।

মাদারীপুর : বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি সীমিত আকারে চলাচল করছে। তবে লঞ্চ, স্পিডবোটসহ অন্য নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল সকাল থেকেই কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোটসহ নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছিল।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া আরও খারাপ হলে দুর্ঘটনা এড়াতে বেলা ১২টার দিকে এ রুটের সব ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোটসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে উভয় ঘাটে কয়েকশ যানবাহন আটকে পড়ে যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিকাল থেকে সীমিত আকারে বড় ফেরিগুলো চলাচল করছে। -বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে