নিউজ ডেস্ক : রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, অং সান সু চি মানবতাবিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত হয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকার পশুর চেয়েও নিষ্ঠুর আচরণ করেছে। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম উদাহরণ। গণহত্যার শামিল এই নির্যাতনের ভয়াবহতা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
‘বার্মায় গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে নাগরিক কমিশন’ চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা এ কথা বলেছেন। আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেন তিনি।
গতকাল শনিবার কমিশনের সদস্যরা উখিয়ার কুতুপালং-১ ও ২ ত্রাণশিবির পরিদর্শন করেন এবং প্রায় ২০০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ শিশুর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এ সময় রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যের সেনাবাহিনী কর্তৃক গুলি করে হত্যা-ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধনসম্পদ লুটের ভয়াবহতা তুলে ধরেন।
বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, অন্য একটি দেশের ভার আমাদের ওপর এসে পড়েছে। এই ভার দীর্ঘদিন বহন করা সম্ভব নয়। সত্বর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পাঁচ দফা বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়, সারা বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক কমিশনের সদস্য সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে করা আনান কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতা আমাদের নজরে এসেছে। আনান কমিশনের প্রতিবেদনে স্বাভাবিক চলমান গণহত্যার উল্লেখ নেই, তবে প্রচ্ছন্ন সন্ত্রাসের উল্লেখ রয়েছে।
আমাদের কমিশনের প্রতিবেদনে আনান কমিশনের সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতা অতিক্রম করে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বার্মার সরকার, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেচনার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, শনিবার উখিয়ার ত্রাণশিবিরে প্রায় ২০০ জন রোহিঙ্গার জবানবন্দি সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও ১০ হাজার রোহিঙ্গার জবানবন্দি সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বয়ান, বাংলাদেশ ও বার্মার বিভিন্ন সরকারি দলিলপত্রের ভিত্তিতে নাগরিক কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, মেজর জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রশীদ, মমতাজ লতিফ, মানবাধিকারকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস, মাওলানা জিয়াউল হাসান।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, আমাদের কমিশন কোনো চাপ প্রয়োগকারী বা লবিস্ট সংস্থা নয়। তারপরও আমাদের এই তদন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রভাব ফেলবে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের যে আইডি কার্ড ( বায়োমেট্রিক নিবন্ধন পরিচয়পত্র) দেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে। জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত না করলে এটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু হবে তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান আসীফ মুনীর, নাদিয়া চৌধুরী, কাজী মুকুল, তৌহিদ রেজা নূর প্রমুখ।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে /এস