নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলোকে টাকা ও পয়সার হিসাবে ব্যাখ্যা করে দেয়া তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তোলপাড় চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
বুধবার নিজ জেলা কুষ্টিয়ার মিরপুরে আয়োজিত জনসভায় জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগ এক টাকার ৮০ পয়সা এবং বাকি ২০ পয়সা অন্য শরিক দল উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, শরিকদের ছাড়া আওয়ামী লীগ এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখতে পারবে না। তার এ বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় উঠে। পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য আসে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না জানালেও তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে নাখোশ হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।
গতকাল পৃথক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
ওবায়দুল কাদেরের মতে, হাসানুল হক ইনু অভিমানের বোমা ফাটিয়েছেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বেশি মানুষ দেখে আবেগের বশে মন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন। এদিকে বুধবার কুষ্টিয়ার জনসভায় দেয়া তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যটি মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেয়া।
এর আগে একই স্থানে আওয়ামী লীগের জনসভায় আওয়ামী লীগের নেতারা জাসদের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। ওই বক্তব্যের জবাব দিতেই পাল্টা সমাবেশ ডেকেছিল স্থানীয় জাসদ। এই সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমেরও প্রস্তুতি ছিল তাদের।
সমাবেশে জাসদ সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি আশি পয়সা। আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর এই ইনু মিললে এক টাকা হয়। আমরা যদি না থাকি, তাহলে আশি পয়সা নিয়ে রাস্তায় ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না।’
এই বক্তব্য প্রচারের পর গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জোটের প্রধান শরিকসহ অন্য শরিকদের সতর্ক করতেই তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। মহাজোটের ক্ষতি হলে দেশ রক্তাক্ত আফগানিস্তান হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ইনু বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা শরিক দলগুলোর অতীত ইতিহাস জেনেশুনে, বুঝে, ঐক্য গড়ে তুলেছেন। শেখ হাসিনা ৯৯ পয়সা অথবা ৮০ পয়সার মালিক হয়েও ২০ পয়সা অথবা এক পয়সার সমতুল্য শরিকদের কদর করেছেন। দাম দিয়েছেন। শেখ হাসিনা মহাজোট গঠন করে রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার এই দূরদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের পরও কয়েকজন নেতা-নেত্রী ঐক্যকে খাটো করে বক্তব্য ও বিবৃতি দেন। ঐক্যের শরিকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের আচরণ ঐক্যের ক্ষতি করে এবং জঙ্গিবিরোধী সংগ্রামকে দুর্বল করে। জঙ্গি দমন করার জন্য যেরকম ঐক্য দরকার, জঙ্গিমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশকে স্থায়ী করতে, উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে স্বাধীনতার সপক্ষের হাজার বছরের ঐক্য করা দরকার।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই দু’টির বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাসদ সভাপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, ইনু সাহেব অভিমানের বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি নিজেও জানেন আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন করলে ফলাফল কী হবে। সেটা তিনি আগেও টেস্ট করেছেন। আমরা বিষয়টি আমাদের ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে জানিয়েছি। এটা নিয়ে আর বেশি কিছু এখানে না বলাই ভালো।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইনু সাহেব হয়তো এমন বক্তব্য দিয়ে আত্মতৃপ্তির ডেকুর তুলতে চাচ্ছেন। এদিকে সিরাজগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বেশি মানুষ দেখে আবেগের বশে বেহুঁশ হয়ে যে কেউ মন্তব্য করতে পারেন। সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে ১৪ দলের কোনো সম্পর্ক নেই।’
নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটেই বারবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে, কারো অনুকম্পায় নয়। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখন ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। কোনো বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করার সময় এটা নয়।
এমটিনিউজ/এসবি