কাফি কামাল : জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ আজ। সমাবেশ থেকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
রাজধানীতে প্রায় দুই বছর পর খালেদা জিয়ার এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতারা। সমানে প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকার প্রতিবেশী কয়েকটি জেলার বিএনপির নেতারাও।
লক্ষ্য একটাই, কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতির মাধ্যমে তারা সমাবেশকে পরিণত করতে চায় জনসমুদ্রে। ভাঙতে চায় সোহরাওয়ার্দীতে অতীতের সমাবেশের সব রেকর্ড। সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশের মাধ্যমে দেশবাসীর পাশাপাশি সরকারকেও কিছু বার্তা দিতে চায় দলটি।
তেমন ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, সমাবেশটি জাতীয় রাজনীতি ও বিএনপির জন্য সাংগঠনিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সমাবেশ থেকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। এদিকে সমাবেশের আগের দিন পুলিশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে অনুমতিপত্রে জুড়ে দেয়া হয়েছে ২৩টি শর্ত। যদিও সমাবেশ সফল করতে সে শর্তকে বড় কোনো প্রতিবন্ধক মনে করছেন না দলটির নেতারা।
ওদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে শুক্রবার রাত থেকেই নেতাদের বাসাবাড়িতে পুলিশ তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মীকে। শনিবার রাতেও অব্যাহত ছিল পুলিশের সে অভিযান।
বিএনপি ও অঙ্গদলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার এড়াতে সপ্তাহখানেক ধরে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা নিরাপদে অবস্থান করছেন। সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে সরকারের তরফে সম্ভাব্য নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে ভিড় করছেন শুক্রবার থেকেই। গ্রেপ্তার এড়াতে হোটেলের এড়িয়ে অবস্থান নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে। রাজধানীর প্রতিবেশী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা শনিবার দুপুর থেকে ঢাকা ঢুকেছেন।
নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার শেষে দেশে ফেরার পর নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নেতাকর্মীরা যেভাবে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়েছিল সোহরাওয়ার্দীতেও তাই ঘটবে। জনস্রোতের কাছে অনুমতিপত্রের শর্তসহ হারিয়ে যাবে সরকারের যাবতীয় কৌশল।
সমাবেশের প্রস্তুতির ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সমাবেশের ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। সমাবেশে বিএনপির তরফে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
শনিবার বিকালে সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে তার নেতৃত্বে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সভা করেছে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কমিটি। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা সম্পর্কে প্রস্তুতি নিয়ে বলেন, সরকারের দুঃশাসন, নিপীড়ন ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকারকে ‘না’ বলতে তারা উদগ্রীব। সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাগম ঘটবে।
জনতার যে জোয়ার সৃষ্টি হবে তা ঠেকানোর সাধ্য কারও নেই। জনসভা ওইদিন নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ। নোমান বলেন, সমাবেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় ১ হাজার নেতাকর্মীকে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব দেয়া হলেও দলের প্রতিটি নেতাকর্মীই স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করবেন। সমাবেশে ঢোকার পথে আর্চওয়ে স্থাপন ও স্বেচ্ছাসেবকরা মেটাল ডিটেকটর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী-সমর্থকরাই সোহরাওয়ার্দী সমাবেশস্থলটি ভরিয়ে দিতে চায়। সে লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দীর গণসমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল শুরু হয় মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন। বিএনপির সমাবেশস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার। এ সময় তিনি মঞ্চ নির্মাণের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের নির্দেশনা দেন।
এসময় সেখানে থাকা সমাবেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ আল নোমান জনসমাগম ও মানুষজনের চলাচলের সুবিধা-অসুবিধার যুক্তি তুলে ধরে সামান্য সরিয়ে মঞ্চ নির্মাণের জায়গা চিহ্নিত করে দেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশের নিরাপত্তার বিষয়টি জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার জানান, ২৩টি শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সমাবেশকে ঘিরে কঠোর ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে পুলিশ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। সন্দেহভাজনদের দেহতল্লাশি করা হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রথমে ৮ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। তবে সিপিএ সম্মেলনের কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ৯ই নভেম্বরের পর সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়। এরপর ১১ই নভেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও যুবলীগের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেদিন সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠান থাকায় একদিন পিছিয়ে ১২ই নভেম্বর সমাবেশের দিন চূড়ান্ত করে বিএনপি।
প্রায় দুই বছর পর রাজধানীতে এটি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ই জানুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দীতে খালেদার সর্বশেষ সমাবেশ হয় ২০১৪ সালের ২০শে জানুয়ারি। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি