নিউজ ডেস্ক : শুক্রবার নিজের নির্বাচনী এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর এখনো স্বাভাবিক হতে পারছেন না সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। সিলেটে চিকিৎসা নিয়ে ঢাকার বাসায় ফিরলেও চিকিৎসক তাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঘটনার তিন দিন পার হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় হতবাক এ জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শপথ নেয়ার আগেই কিভাবে এত ক্ষমতা পায় সেটি তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।
তিনি বলেন, একটি সরকারি অনুষ্ঠানে হামলা করার পর পুলিশ ও প্রশাসন এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায়ও তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। শুক্রবারের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এটিই প্রথম ঘটনা না। এর আগেও উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা মিয়া ও তার লোকজনের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে।
কেয়া বলেন, ১লা নভেম্বর জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানেও তারা বাধা দেয়। গত ৪ঠা নভেম্বর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন থাকায় আমি প্রকাশ্যে কোনো অভিযোগ করিনি। কারণ তারা মিয়া দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনের আগে আমি কোনো অভিযোগ দিতে চাইনি।
তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে শপথ নেয়ার আগেই যদি একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সংসদ সদস্যের ওপর হামলা করতে পারে তাহলে শপথ নেয়ার পর সে কি করবে তাতো ভাবনার বিষয়। এলাকার মানুষ তার কাছে কী নিরাপত্তা পাবে- এটিও আমার প্রশ্ন।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন সংসদ সদস্যের ওপর হামলা করে, সরকারি অনুষ্ঠানে বাধা দিয়ে তারা মিয়া ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিতে পারেন কিনা এটি মানুষ জানতে চায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কেয়া চৌধুরী বলেন, সেদিনের ঘটনাটি পুলিশের সামনে ঘটেছে। তারা মিয়ার গাড়িচালক যখন আমার অনুষ্ঠানে এসে লুকিয়ে ভিডিও করছিল তখন আমার লোকজন তাকে আটক করে মোবাইল ফোন জব্দ করে আমার হাতে দেয়।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠান শেষে আমি বেদে পাড়া পরিদর্শনের সময় তারা মিয়া তার লোকজন নিয়ে আমার পথ রোধ করে জব্দ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আমি সেটি না দিতে চাইলে তারা মিয়ার সহযোগী শাহেদ আমার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। এতে আমার হাত মচকে যায়।
এমপি কেয়া বলেন, এসময় তারা মিয়াও আমার গায়ে ধাক্কা দেয়। এসময় ঘটনাস্থলেই পুলিশ ছিল। তারা তারার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে গাড়িতে উঠে যেতে বলে। এসময় তারা মিয়া ও তার লোকজন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
তিনি বলেন, তারা আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নিয়েও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে। এসময় তারা মিয়ার লোকজন আমার সঙ্গে থাকা মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও মারধর করে। আমার ব্যক্তিগত সহকারীকে লাঞ্ছিত করে।
কেয়া বলেন, হামলার দিন সকাল থেকেই তারা মিয়া তার লোকজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান না করার হুমকি দিচ্ছিল। পরে অনুষ্ঠানে মাইক ব্যবহার না করতে বলে। হুমকির মধ্যেই আমি অনুষ্ঠানে অংশ নেই। এভাবে একজন সংসদ সদস্যের অনুষ্ঠানে হামলা হতে পারে এটি আমার ধারণায় ছিল না।
কেয়া চৌধুরী বলেন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি তারা মিয়া জুয়ার আসর বসানোসহ অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের একটি চক্র উপজেলার বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করে। তারা মিলেমিশে সরকারি পাহাড়-টিলা বিক্রি করে। গাছ বিক্রি করে। এসব তাদের অর্থ আয়ের উৎস।
তিনি বলেন, তাকে জেলা পর্যায়ের নেতারা রাজনৈতিক আশ্রয়- প্রশ্রয় দেন। এর আগে থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তাকে বেশিদিন থাকতে দেয়া হয়নি। ওই ওসির বিরুদ্ধে মিছিল- সমাবেশ পর্যন্ত হয়েছে। তারা মিয়া যে রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে এসব করছে তার প্রমাণ সে নিজেই তার নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছে।
ঘটনার পর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার নাম উল্লেখ করে তারা মিয়া বলেছেন, ওই নেতা চাইলে তারা সব করতে পারে। তিন ধাপের এক ধাপ নাকি সে দেখিয়েছে। আমি জানি না তাদের বাকি দুই ধাপের পরিকল্পনা কী?
কেয়া চৌধুরী বলেন, হামলার ঘটনার পর জেলা যুবলীগের নেতারা বলছেন তারা মিয়া যুবলীগের কেউ না। সে যদি যুবলীগের না হয়ে থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দিলো কিভাবে। দলের লোকজন তার পক্ষে কাজ করে কিভাবে?
তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ব্যক্তিগতভাবে খোঁজখবর নিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খানসহ জেলার কয়েকজন নেতাও খোঁজ নিয়েছেন। তবে প্রশাসন ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, যেহেতু আমি সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে বাধা দেয়া মানে সরকারের কাজে বাধা দেয়া। সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কেন নেয়া হচ্ছে না তাও আমি বুঝে উঠতে পারছি না। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসএস