নিউজ ডেস্ক : হাই প্রোফাইল ৭ সফর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ঢাকা। কাল থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ৭ রাষ্ট্র ও জোটের প্রতিনিধিদের সিরিজ ঢাকা সফর। যার মধ্যে রয়েছেন- মার্কিন সিনেট কমিটির ৫ সদস্য, চীন, জাপান, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কানাডার উন্নয়ন মন্ত্রী।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা সংকটই হবে তাৎপর্যপূর্ণ সফরগুলোর মুখ্য আলোচ্য। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ-বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের অবস্থা সরজমিন দেখতে উদ্বিগ্ন সব অতিথিই কক্সবাজার যাবেন। তবে এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম থাকছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকায় প্রায় দু’দিন কাটাবেন।
তবে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন বা মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি দেখার তার কোনো আগ্রহ এখনও নেই। সেগুনবাগিচা অবশ্য আশা ছাড়ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছেন না, এখনই তা হলফ করে বলা মুশকিল। শেষ সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো, দেখা যাক কি হয়?
তবে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদের কক্সবাজার সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে গতকাল আনুষ্ঠানিক যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রচার করা হয়েছে তাতে চীনের কোন উল্লেখ নেই। ‘ইইউ অ্যান্ড জাপান রিঅ্যাফার্ম সাপোর্ট টু বাংলাদেশ অন রোহিঙ্গা ক্রাইসিস’ শীর্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় জার্মানী, সুইডেন, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইইউ’র উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি রোববার দিনব্যাপী কক্সবাজার সফর করবেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সঙ্গ দেবেন। তারা সেখানে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখবেন। আগস্টে রাখাইনে অস্থিরতা শুরুর পর উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদের এমন সমন্বিত সফর এটিই প্রথম। তারা উখিয়ার কতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। সেখানকার মানবিক সংকট পরিস্থিতি তারা স্বচক্ষে দেখবেন।
জাতিসংঘের অধীন সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। বাংলাদেশ আশা করছে- রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আগামী দিনেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে এ সফরগুলো ভূমিকা রাখবে। ইউরোপের দেশগুলো, জাপান এবং ইইউ’র উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির সমন্বিত এ সফর রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশগুলো এবং সংস্থার সমর্থনের প্রতিফলন বলেও মনে করে বাংলাদেশ।
এদিকে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিনেটর জেফ মার্ক লে’র নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দল কাল ঢাকায় দিনের শুরুতে পৌছাবে। ওই দিনই প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার যাবে। তারা উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবে।
২ জন সিনেটর, ৩ কংগ্রেসম্যান এবং ৪ জন স্টাফারের সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন প্রতিনিধি দলটি ১৯শে নভেম্বর ফিরে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সাক্ষাৎ, বৈঠক ও মতবিনিময় করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কক্সবাজার যাবেন রোববার: পৃথক সময়ে চীন, জাপান, জার্মানি, সুইডেন ও ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় পৌঁছাবেন। তবে তাদের কক্সবাজার সফর হবে একসঙ্গে। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতি তা-ই।
সফর বাস্তবায়নে সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কালই (দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে) ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার। পরদিন রোববার ভোরে পৌঁছাবেন (১৯শে নভেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফেদেরিকা মগেরিনি।
স্পেশাল ফ্লাইটে আসছেন তারা। রোরবার দিনের শুরুতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে তারা কক্সবাজার যাবেন। সেখানে দুপুর অবধি কাটাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব, চিফ অব প্রটোকল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ডেস্কের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তাদের সফরসঙ্গী হবেন। বিকালে ঢাকায় ফিরে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ-বৈঠক হবে।
অতিথিদের সম্মানে মিয়ানমার যাত্রা পিছিয়েছেন মাহমুদ আলী: মিয়ানমারের রাজধানী নেপি’ডতে ২০ ও ২১শে নভেম্বর এশিয়া ইউরোপ মিটিং- আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের আগে দেশটিতে দ্বিপক্ষীয় সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ ছিল মন্ত্রী মাহমুদ আলীর। কিন্তু ওই সময়ে ৫ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বর্পূর্ণ অতিথিদের ঢাকা সফরের কারণে সেই সফর পিছিয়েছেন হোস্ট মাহমুদ আলী।
আসেম সম্মেলনের পরে বাড়তি দু’দিন ২২ ও ২৩শে নভেম্বর মিয়ানমারে তার দ্বিপক্ষীয় সফরের সূচি নির্ধারিত হয়েছে। ওই সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, ঢাকায় আসা ভিন দেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে পুরোপুরি সময় কাটাতে মন্ত্রী মাহমুদ আলী নিয়মিত ফ্লাইটে তার মিয়ানমান যাওয়ার প্রস্তুতি বাতিল করেছেন। ১৯শে নভেম্বর রাতে অন্য অতিথিদের বিদায় দিয়ে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ বিমানে মাহমুদ আলী নেপি’ডর সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের সফর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত সপ্তাহে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ চার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওসের দূতের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, নেপি’ডতে অনুষ্ঠেয় আসেম সম্মেলনের আগে ১৬-১৭ই নভেম্বর দ্বিপক্ষীয় সফরে মিয়ানমার সরকার আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
কিন্তু ওই সময়ে চীন, জাপান, জার্মানি, ইইউ ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বাংলাদেশে আসছেন। ফলে মিয়ানমার প্রস্তাবিত তারিখে সফরে যেতে পারছি না। তবে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করতে আসেম সম্মেলনের পর ২২ ও ২৩শে নভেম্বর মিয়ানমার থাকার ইচ্ছা রয়েছে।
কানাডার উন্নয়নমন্ত্রী আসছেন ২১শে নভেম্বর: এদিকে সিরিজ সফরের সর্বশেষ সফর হবে কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী মারি ক্লদ বিবুর। আগামী ২১শে নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক ও সাক্ষাৎ হবে তার। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসএস