শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৫:০৬

জয় সম্পর্কে যা বলল জামায়াত

জয় সম্পর্কে যা বলল জামায়াত

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ওয়াশিংটন টাইমস নামক একটি পত্রিকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দমন করার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করে যে নিবন্ধ লিখেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, জয় ওয়াশিংটন টাইম্স (ওয়াশিংটন পোস্ট নয়) পত্রিকায় ‘আনমাসকিং টেররিস্ট ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদীদের মুখোশ উন্মোচন) শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এ পত্রিকাটি খ্রিষ্ঠধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য জনাব জয় উঠেপড়ে লেগেছেন, যা তার লেখায় ফুঠে উঠেছে। জয়ের এ ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে সমূলে নির্মূল করার জন্য যে এজেন্ডা নিয়ে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল এবং জনগণের ভোট ছাড়াই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি  পুনরায় ক্ষমতা দখল করে তাদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। তাদের নিকট দেশ, দেশের মানুষ, গণতন্ত্র, আইনের শাসন বড় কথা নয়। তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য করা এবং ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। এ লক্ষেই তারা তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে।

‘জয় তার সরকারের ব্যর্থতা ঢাকা দেবার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের ধূয়া তুলে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ ও অসংলগ্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তার সাথে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের অপপ্রচার জামায়াতের বিরুদ্ধে অহরহ চালানো হচ্ছে। কিন্তু জনগণ জামায়াতকেই একটি আস্থাভাজন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। যার প্রমাণ বিগত উপজেলা নির্বাচন ও তৎপরবর্তী বিভিন্ন নির্বাচনসমূহ।’

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ১৩ জন নেতা-কর্মীকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিবন্ধনকৃত বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটি ঘরোয়া বৈঠক করছিলেন। এ সময় পুলিশ ঐ বাসাটি ঘেরাও করে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের নিকট থেকে পুলিশ ২০টি হাতবোমা, ২৫টি বাঁশের লাঠি এবং উগ্রপন্থী সাহিত্য পাওয়ার এক অলীক নাটক মঞ্চস্থ করেছে।

জামায়াত বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো, মানুষ হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, লাশ গুম ও প্রতিপক্ষ নির্মূলের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কোনো জুড়ি নেই। এ সত্য কথাটি অতি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যক্কারজনক ঘটনার দ্বারা গোটা দেশের জনতার কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী পুলিশ বাহিনী জামায়াত নির্মূলের অংশ হিসেবে জামায়াতের ২ জন সাবেক এমপিকে আটক করে এ প্রহসনের আয়োজন করেছে। এ নাটকের সাথে জয় নিজেকে সম্পৃক্ত করে প্রমাণ করেছেন এ ঘটনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত করে নিজেদের দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, জয় তার নিবন্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা, ২ লাখ নারী ধর্ষণ এবং লক্ষ্য লক্ষ্য লোককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে জামায়াত সহযোগিতা করেছিল বলে উল্লেখ করেছেন যা আদৌ সত্য নয়। ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা ছিল রাজনৈতিক। কোনো ধরনের খুন, লুটতরাজ, নারী ধর্ষণ ইত্যাদি মানবতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান খুন ও লুটতরাজের সাথে সম্পৃক্তদের শনাক্ত করার জন্য যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন, সেখানে বর্তমানে আটক জামায়াতের কোনো নেতার নাম ছিল না। ঐ সময় অর্থাৎ জয়ের নানার শাসনামলে জামায়াত নেতৃবৃন্দের নামে বাংলাদেশের কোনো থানায় মামলা তো দূরে থাক, একটি জিডিও ছিল না।

৪২ বছর পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে সরকার জামায়াত নেতৃবৃন্দকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে বলে অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি কয়েকজন ব্লগার হত্যার সাথে জামায়াতকে জড়ানোর জন্য জয় অপচেষ্টা চালিয়েছেন। ব্লগারদের হত্যার সাথে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই। ব্লগার হত্যার অভিযোগে এ পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে জামায়াতের কেউ নেই। জামায়াত বিবৃতি দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছে।

এতে বলা হয়, জয়ের দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আইনের শাসন ও মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। সন্ত্রাসের কারণে যদি নিষিদ্ধ করতে হয় তাহলে জামায়াতকে নয় বরং জয়ের দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত।

বিবৃতিতে বলা হয়, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ, খুন, গুম, চাঁদাবাজি, অন্যের জমি-বিশেষ করে হিন্দুদের জমি দখল, তাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন মানববন্ধন করে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছে যে, তাদের সম্পদ-সম্পত্তি দখল ও হিন্দু নারী ধর্ষণ সরকারী দলের লোকেরা তাদের মৌলিক অধিকার বলে মনে করে। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারী শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিরোধী দলকে পুলিশ দ্বারা কোণঠাসা করে এখন তারা নিজেরাই নিজেদের কোন্দলে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চালাচ্ছে। আইন ও শালিস কেন্দ্রের একটি তথ্যে জানা গিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মাসে ১৬টি সহিংস ঘটনা ঘটছে, আহত হচ্ছে গড়ে ২০০ জন, নিহত হচ্ছে ২ থেকে ৩ জন। এছাড়া বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের দ্বারা গুম, খুন ও অপহৃত হচ্ছে। দেশের মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন।

জামায়াত বলছে, সভা-সমাবেশ করা মানুষের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। অথচ এখন বাংলাদেশে বিরোধী দলকে সরকার কোনো সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। বাংলাদেশে এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন চলছে। সাংবাদিকরাও জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদসহ বহু সাংবাদিক সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি ও ইসলামী টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জয় তার সরকারের জুলুম, অত্যাচার এবং ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের ধুয়া তুলে বিদেশি রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। জয়ের পর তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জয়ের সুরে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনকে উগ্রপন্থীদের উত্থানের ব্যপারে সতর্ক করেছেন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছেলে ও মা একই সূরে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বিদেশিদের নিকট অপপ্রচার চালাচ্ছেন যা দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

বিবৃতিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে