নিউজ ডেস্ক : শুধু ডিভাইসের মাধ্যমে না, প্রশ্নপত্রও ফাঁস করতো চক্র। বিপুল টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হতো। যে প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপানো হতো সেই প্রেসের এক কর্মচারীর মাধ্যমেই এই প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতো চক্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে খান বাহাদুর (২৮) নামের ওই প্রেস কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। খান বাহাদুরের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পৌঁছে যেতো চক্রের পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ইসামীর হাতে। চক্রের শীর্ষ এই দুই হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ বিষয়ে গতকাল সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, বুধবার রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুরকে। তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এই চক্রের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। চক্রের আরেক হোতা রকিবুল হাসান ইসামীও পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত তিন মাসে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গত সাত থেকে নয় ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে।
তারা হচ্ছে- ঢাকার জিগাতলা থেকে নাজমুল হাসান নাঈম (২০), রাজশাহী মেডিকেল এলাকা থেকে বনি ইসরাইল (২২) ও রাজশাহীর বিনোদপুর এলাকা থেকে মারুফ হোসেন (২৪)। সংবাদ সম্মেলনে মোল্লা নজরুল জানান, চক্রের হোতারা প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতো ও সরবরাহ করতো। মাঠের কর্মীরা ভর্তিচ্ছু ছাত্র সংগ্রহ করে রকিবুলের কাছে সরবরাহ করতো। এভাবেই চলছিল তাদের প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য। বনি ইসরাইল ও মারুফের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, এদের মধ্যে ডিভাইস সাপ্লই গ্রুপই নয়, প্রশ্নফাঁসের গ্রুপও জড়িত।
মোল্লা নজরুল বলেন, গত ১১ই ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ইসামীকে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত বুধবার জামালপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাইফুল ইসলামকে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুরের সঙ্গে পরিচয় ছিল সাইফুলের। সাইফুল এক সময় রকিবুল হাসান ইসামীর কাছে প্রশ্নের বিষয়টি জানায়। ইসামীর পরামর্শ দেয়, প্রশ্ন ছাপানো হলে তা দ্রুত সংগ্রহ করে তাকে দেয়ার জন্য। এভাবেই গড়ে ওঠে প্রশ্ন ফাঁসের চক্রটি।
গত ২০শে অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগেরদিন রাতেই প্রশ্নের ইংরেজি অংশটি ফাঁস হয়ে যায়। বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। পরীক্ষার আগের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রানা ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আটক করা হয়।
প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তাদের কাছ থেকে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করেন। মাস্টার কার্ডের মতো দেখতে ওই ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতো। এতে থাকে মোবাইল সিম ও পরীক্ষার হলে ব্যবহারের জন্য থাকে অতি ক্ষুদ্র লিসেনিং কিট। ওই ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থাকা চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হতো পরীক্ষার্থীর।
আটক শিক্ষার্থী রানা ও আব্দুল্লাহর তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ পরীক্ষার্থীকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের কাছ থেকে ডিভাইস জব্দ করা হয়। আটকদের মধ্যে থেকে ১২ শিক্ষার্থীকে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আটকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যায় তদন্ত। গত ১লা থেকে ৩রা নভেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক হোসেন রাফি, ফারজাদ সোবাহান নাফি এবং এই চক্রের অন্যতম হোতা আনিন চৌধুরীকে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল বলেন- রাফি, নাফি ও আনিনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৪ই নভেম্বর রংপুর থেকে নাভিদ আনজুম তনয় এবং গাজীপুর থেকে এনামুল হক আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। তনয় এবং আকাশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২১শে নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় ১১ জনকে।
তারা হচ্ছেন, নাহিদ ইফতেখার (১৯), রিফাত হোসেন (১৯), বায়জিদ (১৯), ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির (১৯) তানভীর আহম্মেদ মল্লিক (১৯), প্রসেনজিৎ দাস (২০), আজিজুল হাকিম (২০), টিএম তানভির হাসনাইন (১৮), সুজাউর রহমান সাম্য (১৯), রাফসান করিম (১৯) ও আখিনুর রহমান অনিক (১৯)।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল জানান, ইতিমধ্যে, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি