রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০১:১৮:০০

৯ বছরে ১২ হাজার নেতাকর্মী রাজনৈতিক হত্যার শিকার : ফখরুল

৯ বছরে ১২ হাজার নেতাকর্মী রাজনৈতিক হত্যার শিকার : ফখরুল

নিউজ ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে বিরোধী জোটের ১২,৮৫০ জন নেতাকর্মী রাজনৈতিক হত্যার শিকার হয়েছেন।

গতকাল রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে আয়োজিত দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় মহাসচিবের প্রতিবেদনে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

আজ বিএনপির কারাগারে থাকা নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর, কাজী সলিমুল হক কামাল, হাসান মামুন, মশিউর রহমান বিপ্লব, বেগম রাজিয়া আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী প্রমুখ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জানে তাদের হাত প্রতিবাদী মানুষের রক্তে রঞ্জিত, তারা নিপীড়ক-জুলুমবাজ ও গণবিচ্ছিন্ন। তারা জানে দেশের জনগণের সব ঘৃণা তাদের প্রতি। অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে; এটা অনুধাবন করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের নীল নকশার মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছে।

এই লক্ষ্যে তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংযোজন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধানটি বাতিল করেছে। আমরা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী সংযোজনের বিষয়টি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের নেত্রী বলে দিয়েছেন আগামী নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে হতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না এবং সেরকম নীলনকশার কোনো নির্বাচন এদেশে হতেও দেয়া হবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার এই ঘোষণার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।

ফখরুল বলেন, বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই জনগণ পঞ্চদশ সংশোধনীকে গ্রহণ করেনি বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা জনগণের সঙ্গেই আছি ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে গণদাবি উঠেছে তা আদায়ে রাজপথে অবস্থান নিয়েছি।

দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, চালের দাম আজ মানুষের নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীরবে নিভৃতে অসংখ্য পরিবার আজ অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। ফলে শিশুদের পুষ্টির অভাব দেখা দিয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্যমূলক নীতির কারণে শিল্প খাত ধ্বংস হতে চলেছে। বস্ত্র শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প, ওষুধ শিল্প এবং পোলট্রি শিল্পে মারাত্মক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সর্বস্বান্ত হয়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছে।

দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অসংখ্য মিল-কারাখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমিক পাঠানো তো দূরের কথা হাজার হাজার শ্রমিক ফিরে আসছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প কল-কারখানা বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। সেচে অচলাবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নামে বছরে প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে লুটপাট চলছে। দেশের অর্থনীতির সকল সূচক আজ নিম্নগামী।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই তাদের প্রভুদের তুষ্ট করার জন্য দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছে, ভূলুণ্ঠিত করেছে প্রিয় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে দেশের আপামর জনসাধারণ, পানি বিশেষজ্ঞগণসহ বুদ্ধিজীবীমহলের অব্যাহত বিরোধিতা সত্ত্বেও এই দেশবিরোধী সরকার ভারতকে সম্মতি দিয়েছে বলে ভারতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

ফখরুল বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল মরুকরণ হবে। বিপন্ন হবে মেঘনা অববাহিকার কৃষি, কৃষক, জীবন-জীবিকা, জীববৈচিত্র্য ও অর্থনীতি। বিনা মাশুলে ট্রানজিটের নামে দেশের ওপর দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নজিরবিহীনভাবে করিডোর দিয়েছে এই সরকার। সীমান্তে প্রতিনিয়ত নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করে চলেছে ভারতী সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার এর কোনো প্রতিকার তো দূরের কথা প্রতিবাদ পর্যন্ত জানায় না। কাঁটাতারের বেড়ায় কিশোরী ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকার ছবি দেখে যেকোনো বিবেকবান মানুষকে আজও শিউরে উঠতে হয়। একের পর এক প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য দেশবিরোধী চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জনগণের অব্যাহত প্রতিবাদেরও কর্ণপাত করছে না এই পদলেহী নতজানু সরকার।  -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে