রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৮:৪৫:১১

গুলি করে হত্যার পর জনতার হাতে ধরা

গুলি করে হত্যার পর জনতার হাতে ধরা

ঢাকা: প্রধান সড়কের পাশে মাছের বাজার। সেখানে শত শত মানুষের ব্যস্ততা। সড়কেও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের চলফেরায় ব্যস্ততার অন্ত নেই। হর্ন বাজিয়ে ছুটছে গাড়ি। এরই মধ্যে হঠাৎ গুলির শব্দ। পাশেই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন এক যুবক। এই ব্যস্ত মানুষজন বুঝতেই পারল না কে কাকে গুলি করেছে। তবে গুলি করার দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ওঠে এক শিশু। তার ওপর চোখ যায় সবার। অস্ত্র হাতে পাঞ্জাবি পরা এক যুবককে দ্রুত পালিয়ে যেতে দেখে পথচারী ও ব্যবসায়ীরা। এরপর সাহস করে কয়েকজন সেই সন্ত্রাসীর পিছু নেয়। গুলি ছুড়ে ভয় দেখায় সন্ত্রাসী। এতেও দমেনি জনতা। শেষে অস্ত্রসহ ধরে ফেলে ওই আততায়ীকে। গণধোলাইয়ের পর তাকে সোপর্দ করা হয় পুলিশের কাছে।

কিন্তু তখনো ওই সন্ত্রাসীর পরিচয় এবং গুলি করার কারণ কেউ জানত না। জিজ্ঞাসাবাদে যখন গুলি করার প্রাথমিক কারণ জানা গেল, ততক্ষণে হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন গুলিবিদ্ধ যুবক।

ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে দুপুরবেলায় গুলি করে হত্যা এবং নাটকীয়ভাবে জনতার হাতে আততায়ী ধরা পড়ার  এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে গতকাল শনিবার রাজধানীর হাতিরঝিলঘেঁষা মেরুল বাড্ডা এলাকায়। নিহত ব্যক্তির নাম আবুল বাশার বাদশা (৩২)। গতকাল দুপুর ১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। একটি রিভলবারসহ ঘটনাস্থলের কয়েক গজ দূরে জনতার হাতে আটক হওয়া সন্ত্রাসীর নাম নূরুল ওরফে নূরা (৩০)। পুলিশ বলছে, নিহত ও আটক ব্যক্তি দুজনই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা। মেরুল বাড্ডার হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, বাদশা ছিলেন মাছ ব্যবসায়ী।

বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘ঘটনার পর ওই স্থান থেকে একটি রিভলবার ও ছয় রাউন্ড গুলিসহ এক সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহত ও আটক দুই ব্যক্তিই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আধিপত্যের বিরোধে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী ইখতিয়ারসহ কয়েকজন জানায়, গতকাল দুপুর ১টার দিকে ব্যস্ত সড়কের পাশে মেরুল বাড্ডার মাছ বাজারে টয়লেটের পাশে অবস্থান নেয় নূরা। সেখান থেকে বাদশাকে লক্ষ্য করে গুলি করার সময় এক শিশু তাকে দেখে ফেলে। ওই শিশু চিৎকার করে উঠলে অন্যরাও তাকে দেখে ফেলে। স্থানীয়রা নূরাকে ধাওয়া করে। এ সময় নূরা তাদের লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কয়েকজন তাকে ধাওয়া দিয়ে কয়েক গজের মধ্যেই ধরে ফেলে। হাতিরঝিলের রাস্তায় তাকে আটকে গণপিটুনি দিয়ে বাড্ডা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নূরার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪০-৪২টি মামলা রয়েছে। বাদশা নূরার সহযোগী হতে পারে। আর্থিক লেনদেন বা শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। নূরা বনানীর গার্মেন্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

পারিবারিক সূত্র জানায়, বাদশা মেরুল বাড্ডার আনন্দনগর ১৭ নম্বর রোডে মা-বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। তিনি শরীয়তপুরের ডামুড্যার মোস্তফা ফকিরের ছেলে। সন্ধ্যায় স্ত্রী শিউলি আক্তার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে বাদশার লাশ শনাক্ত করেন। এ সময় শিউলি জানান, তাঁরা প্রায় এক বছর ধরে বাড্ডায় থাকেন। এর আগে টঙ্গী থাকতেন। সেখানে থাকার সময় তাঁর স্বামী বাদশা মাদক মামলায় এক বছর জেল খেটেছেন। বাড্ডায় আসার পর বাদশা মৌচাকের একটি শাড়ির দোকানে চাকরি নেন। পাশাপাশি বাড্ডা থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন।

গার্মেন্টে চাকরি করেন জানিয়ে শিউলি বলেন, কে বা কারা বাদশাকে হত্যা করেছে তা তিনি নিশ্চিত নন। ঘটনার সময় তিনি গার্মেন্টে ছিলেন। সকালে বাদশার বন্ধুরা তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। নূরাকে তিনি চেনেন। সে মাদক ব্যবসায়ী। বেশ কয়েক দিন ধরে সে বাদশাকে মাদক ব্যবসা করতে বলে আসছিল, কিন্তু বাদশা রাজি হচ্ছিলেন না। সে কারণে বাদশাকে হত্যা করতে পারে নূরা, এ দাবি করেন শিউলি।-কালের কণ্ঠ
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে