সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৩০:৪৩

ক্লাস চলে গাছতলায়

ক্লাস চলে গাছতলায়

নিউজ ডেস্ক : ১৪ মাসে ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কোথাও স্থানীয় ব্যক্তিদের বাড়ির উঠান বা বারান্দা, কোথাও ঈদগাহ মাঠ, কোথাও-বা ছাপরাঘর তুলে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে।আর এভাবেই চলছে প্রাথমিক শিক্ষা চলছে শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলায়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় বিলীন হওয়ায় সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।বিদ্যালয়গুলোর ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নদীতে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাজিরা উপজেলায় ১১টি, গোসাইরহাটে দুটি, নড়িয়ায় তিনটি ও ভেদরগঞ্জে দুটি রয়েছে। এগুলো হলো জাজিরার সাহেদ আলী মাদবরকান্দি, বড়কান্দি, পাইনপাড়া, নওপাড়া, পাইনপাড়া হাজী অছিম উদ্দিন কান্দি, সুরত খাঁর কান্দি জগৎ জননী, পাইনপাড়া মাদবরকান্দি, সরল খাঁর কান্দি, নজিম উদ্দিন ব্যাপারী কান্দি, কলমিরচর ও পালেরচর ফজলুল হক; গোসাইরহাটের চরমাদারিয়া ও দক্ষিণ কোদালপুর নতুন বাজার; নড়িয়ার জেররাখি, চরমোহন সুরেশ্বর ও চরজুজিরা এবং ভেদরগঞ্জের ছুরিরচর ব্যাপারী কান্দি ও ৪১ নম্বর ছুরিরচর বোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত বছরের জুলাই থেকে বিদ্যালয়গুলোর ভবন নদীতে ভাঙতে শুরু করে। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট ৪১ নম্বর ছুরিরচর বোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল পাকা ভবন ও দুটি টিনের ঘর নদীতে বিলীন হয়। এ কারণে কয়েক দিন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে বিদ্যালয়ের পাশে সরকারকান্দি গ্রামের ঈদগাহ মাঠের পাশে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় একটি ছাপরাঘর তৈরি করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। কিন্তু ওই ছাপরাঘরে বিদ্যালয়ের সাড়ে পাঁচ শ শিক্ষার্থীকে পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।এ কারণে ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচেই চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস। গত শনিবার ৪১ নম্বর ছুরিরচর বোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে খোলা আকাশের নিচে পাশাপাশি বসিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক ও দুজন সহকারী শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা চটের ওপর বসে লেখাপড়া করছে। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকিয়া, সুরাইয়া, সুজনসহ কয়েকজন বলে, খোলা আকাশের নিচে রোদের মধ্যে পড়ালেখা করতে তাদের কষ্ট হয়।এ কারণে তারা পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, দ্রুত ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, বিদ্যালয় ভবন বিলীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ইউএনওকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। একই সঙ্গে আর্থিক অনুদানের জন্য আবেদনও করা হয় জেলা পরিষদে। পরে জেলা পরিষদ দুই লাখ টাকা দেয়। ওই টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বাড়িতে একটি ঘর তোলা হয়। কিন্তু এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ভালোভাবে চালানো যাচ্ছে না। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বাড়ির একটি ছাপরাঘরে। গত বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে গাদাগাদি করে বসার পরও সব শিক্ষার্থীর জায়গা হয়নি। কয়েকটি টেবিল বাড়ির উঠানে বসিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ভেদরগঞ্জের ইউএনও সোহেল আহমেদ বলেন, এ উপজেলার দুটি বিদ্যালয়ের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই টাকা এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে পাকা ভবন নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২৩ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে