ফেরদৌস ফয়সাল : হজের অংশ হিসেবে জামারায় (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) পাথর মেরে হাজিদের পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়। হাজিদের অনেকেই নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহালাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন।
অনেকে আবার ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে (আইডিবি) নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে তাদের মাধ্যমে পশু কোরবানি দেন। অনেকে যেসব এজেন্সির তত্ত্বাবধানে যান, তাদের মাধ্যমেও কোরবানি দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের হাজিদের একটি অংশ পরিচিত প্রবাসীদের মাধ্যমে কোরবানি দেন। এই প্রবাসীরা মূলত হজ উপলক্ষে পশু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।
পশু বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ৭ জিলহজের পর থেকে পশু কেনা শুরু হয়। ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত কোরবানি দেয়া যায়। কোরবানির পশুর মধ্যে ছাগল, দুম্বা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ থেকে আসা হজযাত্রীরা সবাই আলাদাভাবে একটি করে পশু কোরবানি দেবেন। সারা বিশ্ব থেকে এবার প্রায় ২০ লাখ লোক পবিত্র হজ পালন করতে এসেছেন। এই হিসাবে মক্কায় এবার শুধু হাজিরাই ২০ লাখ পশু কোরবানি দেবেন।
আইডিবির তত্ত্বাবধানে সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয় মক্কায়। একজন হাজিকে কাল আইডিবির মাধ্যমে পশু কোরবানির জন্য আল-রাজি ব্যাংকের বুথে ৪৭৫ রিয়াল জমা দিতে দেখা গেল। তাঁর নামে তারা পশু কোরবানি দেবে। এর মধ্যে ৩৮৬ রিয়াল পশুর দাম বাবদ। বাকি অর্থ কসাইখানার খরচ, হিমাগারে মাংস সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের গরিব লোকজনের মধ্যে এই মাংস বিতরণের খরচ বাবদ নেওয়া হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশেও এই মাংস যায় ‘দুম্বার মাংস’ নামে।
পবিত্র মসজিদুল হারামের পাশে ছোট ছোট টংঘরেও আইডিবির বুথ রয়েছে। সেখানে অর্থ জমা দিলে তারা কোরবানির ব্যবস্থা নেয়। এ প্রক্রিয়ায় তারা একটি কুপন দেয়। সেই কুপন দেখিয়ে হাজিরা তাঁদের নামে দেয়া কোরবানির মাংস চাইলে দেখতে পারবেন। মক্কায় খাওয়ার জন্য চাইলে ওই কুপন দেখিয়ে ব্যাংকের হিমাগার থেকে কিছু মাংস আনাও যায়।
ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতবার হজের সময় আইডিবির মাধ্যমে ১০ লাখ হাজি কোরবানি দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির এ পরিমাণ মাংস রাখার হিমাগার আছে। হজের পরে বিভিন্ন মুসলিম দেশে এসব মাংস বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
আইডিবির টোল ফ্রি নম্বরে (৮০০-৪৩০-৬৬৬) ফোন করে দুটি তথ্য জানতে চেয়েছিলাম, কোরবানি হয়েছে কি না জানব কীভাবে? তাঁরা বলেন, যাঁরা অনলাইনে কুপন কেনেন অথবা কুপন নম্বর টোল ফ্রি নম্বরে জানান, তাঁদের খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।
মক্কায় পশু ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন বাংলাদেশি জানান, কিছু বাংলাদেশি প্রথমে তাঁদের নিজ জেলা থেকে আসা বয়স্ক হাজিদের খুঁজে বের করে তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। একপর্যায়ে তাঁদের কাউকে দায়িত্ব দিলে কম খরচে (৩৫০ রিয়াল বা ৩০০ রিয়াল) সহজে পশু কোরবানি করে দেয়ার প্রস্তাব দেন এবং মিনা থেকে ফিরে এলে সেই মাংস খাওয়ানোরও প্রতিশ্রুতি দেন। ব্যাংক বা এজেন্সির মাধ্যমে কোরবানি দিলে তা সম্ভব নয় বলে হাজিদের বোঝানো হয়। এতে সহজ-সরল বয়স্ক হাজিরা ‘নিজ এলাকার লোকদের’ বিশ্বাস করে কোরবানির দায়িত্ব দেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার তথ্য তাঁদের অজানাই থেকে যায়।-প্রথমআলো
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে