মিজানুর রহমান হেলাল : গেল সপ্তাহে লন্ডন গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটা তার ব্যক্তিগত সফর। তবে সেখানে দল পুনর্গঠন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি নতুন উদ্যোগ নেবেন বলেও দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি এ সফরে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে নতুন রূপরেখাও চূড়ান্ত করবেন বিএনপি নেতারা।
দুই দফায় লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েও সফল হয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। আন্দোলনের ব্যর্থতায় অনেকটাই হতাশ বিএনপি নেতাকর্মীরা। সে প্রেক্ষাপটে দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে লন্ডনে তারেক রহমানের পরামর্শ নেবেন।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু প্রতিবেদককে বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) লন্ডন গেছেন ব্যক্তিগত সফরে। যদিও এটা কোনো রাজনৈতিক সফর নয়। তবু যেহেতু তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন এবং তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান; কাজেই তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা হতেই পারে।
দল পুনর্গঠন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। চেয়ারপারসনের নির্দেশে আমি নিজেও বেশকিছু এলাকায় গেছি। সেসব এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। কেন্দ্রকে এসব বিষয় অবহিত করেছি। তবে খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরলে এ বিষয়ে আরো তৎপরতা বাড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে সাংগঠনিক সংকট চলছে। এজন্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি তৃণমূল পর্যায় থেকে সমালোচনাও বাড়ছে। এ অবস্থায় লন্ডনে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার এ সাক্ষাৎ থেকে নতুন সমীকরণ আসতে পারে। দলটির নেতাদের অনেকে বলেছেন, তারেক রহমান লন্ডনে থাকলেও দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়াসহ সব বিষয়েই তিনি ভূমিকা রাখেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজনই দলের নীতিনির্ধারক। সুতরাং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন রূপরেখা আসতে পারে। বিএনপির বর্তমান যে সংকট, তা নিরসনে দলের মাঠ পর্যায় থেকে স্থায়ী কমিটি পর্যন্ত নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন হতেই পারে। আর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করবেন, এটা স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমরা সারা দেশে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছি। যারা দলের প্রতি অনুগত, কর্মসূচি বাস্তবায়নে জীবন বাজি রাখবে, তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসব। আর ফাঁকিবাজ ও নিষ্ক্রিয়দের পেছনের সারিতে নিয়ে যাব।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যার যার এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। দয়া করে ঢাকায় বসে পকেট কমিটি করবেন না। কারণ অনেক দিন ধরেই আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। এলাকার অনেক নেতাকেই আমি চিনি, যাদের আপনারাও চেনেন না।
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলকে সক্রিয় করতে তৃণমূলে অর্থাৎ জেলা ও উপজেলায় দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সেক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বিগত সময়ে দলের প্রতি যারা বেশি অনুগত ও আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সামনে নিয়ে আসার বিষয়টি। আর তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠনের পর তারেক রহমান তরুণ এবং সিনিয়রদের সমন্বয় করে স্থায়ী কমিটিতে ও পরিবর্তন আনার বিষয়ে ভূমিকা রাখবেন বলে দলটির একাধিক নেতা জানান।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুণ বলেন, বিএনপির বর্তমান যে সংকট, তা নিরসনে দলের মাঠ পর্যায় থেকে স্থায়ী কমিটি পর্যন্ত নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের নেত্রী বিভিন্ন সময় আলোচনায় তা প্রকাশ করেছেন এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন। এখন লন্ডনে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তা সম্ভব হবে।-বণিক বার্তাকে
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে