ঢাকা : ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। তবে বরাবরের মতো এবারো বঞ্চিত সাধারণ যাত্রীরা। মোট টিকিটের মাত্র ৩৫ শতাংশ দেয়া হয়েছে কাউন্টার থেকে। বাকি টিকিট চলে গেছে বিভিন্ন কোটা আর ভিআইপিদের দখলে। সাধারণ টিকিট সকাল ৯টা থেকে বিক্রি করা হলেও অনুরোধ আর কোটার টিকিট বিক্রি শুরু হয় বেলা ৩টার পর।
জানা গেছে, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ২৮টি আন্তঃনগর ট্রেনের প্রায় ১৭ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ছয় হাজারের মতো টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। বাকিগুলো চলে যায় কোটা আর অনুরোধে। অনুরোধপত্রের মাধ্যমে ভিআইপিদের নামে নেয়া টিকিটের একটি বড় অংশ আবার চলে গেছে কালোবাজারে। ঈদযাত্রার শেষ মুহূর্তে এসব টিকিট সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হবে দ্বিগুণ-চার গুণ দামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে গত মঙ্গলবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এরও ১০ দিন আগে থেকে রেল ভবনে জমা হতে শুরু করে প্রভাবশালীদের ‘অনুরোধপত্র’। রেলপথমন্ত্রী, রেলের মহাপরিচালক, যুগ্ম মহাপরিচালকের (অপারেশন) দফতরে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ডিও লেটার ও অনুরোধপত্র জমা পড়ে। এগুলোর তালিকা যুগ্ম মহাপরিচালকের (অপারেশন) দফতর থেকে প্রতিদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দফতরে পাঠানো হয়। এসব চাহিদাপত্র দেখে সার্ভারে ব্লক করা হয় টিকিট। পরে তা স্লিপের বিনিময়ে দেয়া হয়।
রেলওয়ের তথ্যমতে, কোটায় ট্রেনের টিকিট দেয়ার কথা ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ভিআইপিদের জন্য, ৫ শতাংশ রেল কর্মচারীদের ও ৫ শতাংশ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের। এছাড়া তিন বাহিনী, বিজিএমইএ, বিভিন্ন সংগঠনের জন্যও রয়েছে পৃথক কোটা। আর অনলাইনে বিক্রির জন্য রয়েছে ২৫ শতাংশ। কিন্তু ৫ শতাংশ ভিআইপি কোটার বিপরীতে বাস্তবে ২০-২৫ শতাংশ টিকিট দিতে হচ্ছে।
রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেসে আসন ৭৯৯টি। কোটায় ভিআইপিদের পাওয়ার কথা ৪০টি। গত ঈদ মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই নির্দিষ্ট কোটার চেয়ে ২০ গুণ টিকিট দিতে হয়েছে। এ বাড়তি টিকিট দেয়া হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসন থেকেই। এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী ও ঢাকা-দিনাজপুর রুটে অপেক্ষাকৃত বেশি চাপ পড়েছে ভিআইপিদের।
এদিকে কোটায় ৫ শতাংশ টিকিট সংরক্ষণের প্রথা রয়েছে রেল কর্মচারীদের জন্য। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বড় কর্মকর্তাদের দাপটে ছোট কর্মচারীরা টিকিট পান না। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা-২-এর এক কর্মকর্তা ২১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের ১৬টি টিকিট চেয়েছেন একাই। ২১ সেপ্টেম্বরের ছয়টি, ২২ সেপ্টেম্বরের চারটি, ২৩ সেপ্টেম্বরের চারটি ও ২৪ সেপ্টেম্বরের দুটি টিকিট চেয়ে রেলের যুগ্ম মহাপরিচালকের (অপারেশন) কাছে তিনি চিঠি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিও লেটার ছাড়াও টিকিট পেতে ভিআইপিরা টেলিফোনে তদবির করছেন। তাদের বকুনিও খেতে হচ্ছে। এ কারণে রেল ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দিনের বেশির ভাগ সময় সেলফোন বন্ধ রাখছেন।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ