মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৫০:৪৭

যোগ দিলো আরও দুইটি শক্তিশালী গ্রুপ! একত্রিত হয়ে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

যোগ দিলো আরও দুইটি শক্তিশালী গ্রুপ! একত্রিত হয়ে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের প্রবল আন্দোলনের মুখে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গতকাল সোমবার আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে কোটা সংস্কারের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীদের নেতারা।

কিন্তু মাঠপর্যায়ের আন্দোলনকারীদের একাংশ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে গতকাল সন্ধ্যায় আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহীদের পক্ষে বিপাশা চৌধুরী আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে আবারও অবস্থান কর্মসূচি এবং দেশজুড়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়ে দাবি আদায়ে সরকারকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। এরপর তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়।

এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ফের সমন্বিত আন্দোলনে নেমেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। আন্দোলনকারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর বাইরেও আরো দুইটি শক্তিশালী গ্রুপ যোগ দিয়েছে। এদিন সকাল থেকে মূল কমিটির বাইরে পৃথক দুটি কমিটিকে আন্দোলন করতে দেখা যায়।

কিন্তু গতকাল সংসদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলায় এবং মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী ‘বাজেটের আগে কোটা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব নয়’- এমন ঘোষণা দেয়ায় ফের উত্তেজিত হয়ে পড়েন কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা। তারা নিজেদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত 'ভুলে' মঙ্গল বিকেল ৫টা থেকে ফের একযোগে আন্দোলনে নামেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান ও নুরুল হক নুর বিকেল ৫টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দিতে হবে। ঘোষণায় কবে নাগাদ কোটা সংস্কার করা হবে সেটি উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি এবং আহতদের সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা দাবি জানান তারা।

এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল অবরোধ, ক্লাশ ও পরীক্ষা বর্জন চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে মঙ্গলবার সকালে কমিটির নেতারা বিকেল ৫টার মধ্যে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় বিকেল ৫টার পর তারা ফের আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. রাশেদ খান আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সরকার পক্ষের সঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছিল। তাদের অনুরোধে আমরা এক মাসের সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু সাধারণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তা মেনে নেননি। তারা আন্দোলন চালিয়ে যান, রাজপথে অবস্থান করেন।

কিন্তু আমাদের মধ্যে আলোচনা চলাকালে গতকাল সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের কোটাবিরোধী হিসেবে আখ্যা দেন। আমাদের রাজাকার বলেন। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের ৮০ শতাংশই রাজাকারের বাচ্চা। এমন বক্তব্যে আমরা মর্মাহত। আমরা অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজাকারের বাচ্চা হলাম।

রাশেদ বলেন, ‘বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরীকে ক্ষমা চাইতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমা চাননি। উল্টো অর্থমন্ত্রী আজ সচিবালয়ে বললেন, আগামী বাজেটের আগে কোটা সংস্কারের দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। এরপর আর গতকালের আলোচনা ও এক মাস আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণার কোনো গুরুত্ব থাকে না। তাই আমরা ফের অবরোধ, ক্লাশ ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। কোটা সংস্কারের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কোটা থাকতেই হবে। তবে কত শতাংশ থাকবে সেটা আলোচনার বিয়ষ। এখন কোটার শতাংশ অনেক বেশি। এটা সংস্কার হওয়া উচিত। তবে কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। তারপরও আমি প্রধামন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছি এটিকে সংস্কারের জন্য। বাজেটের পর ৫৬ শতাংশের কোটা অবশ্যই সংস্কার করা হবে। কারণ কোটায় প্রার্থী পাওয়া যায় না।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা কত অংশ থাকবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতেই কোটা প্রথা থাকতে হবে। আসন্ন বাজেটের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কোটা সংস্কারের বিষয়ে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। আলোচনা শেষে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। যদিও সাধারণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত না মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পরিচালিত হলেও কৃষিমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফের সমন্বিত আন্দোলন কর্মসূচিতে নামেন শিক্ষার্থীরা।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে