সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:০৭:২২

‘একটা স্টিলের টিফিন বক্স আজকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে’

‘একটা স্টিলের টিফিন বক্স আজকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে’

মায়ের সাথে থাকা অবস্থায় যখন কোনো মেয়ে নিপীড়ত হয়, তখন একজন নারীর নিরাপত্তা আসলে কতটুকু তা বোধহয় আঁচ করা যায়। রাজধানীতে ফের বাসে হয়রানির শিকার হয়েছে কলেজের এক ছাত্রী। মায়ের সঙ্গে বাসে চড়া ওই ছাত্রী এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।

আব্দুল্লাহপুর থেকে রামপুরা যাওয়ার জন্য মায়ের সঙ্গে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে চড়ে ফারহা সারমিন। মাঝপথে বাসটির বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। ওই ছাত্রী ও তার মা রামপুরায় বাস থেকে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে মা নেমে যান। কিন্তু ওই ছাত্রীকে নামতে চেষ্টা করলে তার হাত টেনে ধরে ৪/এ নম্বর রুটে সদরঘাট থেকে ছেড়ে গাজীপুরা পর্যন্ত চলাচলকারী পরিবহনটির এক কর্মী। তখন হাতে থাকা টিফিন বক্স দিয়ে পরিবহন কর্মীকে আঘাত করে বাস থেকে লাফিয়ে নামে ফারহা।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রামপুরায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই ছাত্রী সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে তার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা লিখে জানান। তার পোস্টটি নিচে তুলে ধরা হলো।

‘একটা স্টিলের টিফিন বক্স আজকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’

আব্দুল্লাহপুর থেকে রামপুরা আসার জন্য বাসে উঠেছিলাম সাড়ে ৬টার দিকে। বাসে দুজন কন্ডাক্টরের একজন মনে হয় ড্রিংক করেছিল।

অনেক ভিড় ছিল, তবে রামপুরা আসতে আসতে প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। পেছনের দিকে কয়েকজন ছেলে বসেছিল আর সামনের দিকে আমি আর আম্মু। বাসের লাইটগুলো বনশ্রীতে এসে বন্ধ করে দেয় ড্রাইভার, বলে যে তার হেডলাইট নষ্ট এ জন্য বন্ধ করেছে।

কালকে (সোমবার) সকালে পরীক্ষা, হাতে সময় নেই বলে কেউ এটা নিয়ে ঝামেলা করিনি। রামপুরায় পৌঁছে গেলে বাস জ‍্যামে পড়ে আর আমরা নামার জন্য দরজার দিকে যেতে থাকি। আম্মু প্রথমে নামে। আমি দরজা পর্যন্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন আমার হাত চেপে ধরে, আম্মু ততক্ষণে নেমে গেছে। আমি নামার চেষ্টা করি কিন্তু বাস সামনের দিকে যেতে থাকে আর পেছনে কয়েকজন বলছিল- ‘মাইয়াটারে ধর’।

কী করব বোঝার মতো সময় ছিল না। অন্য হাতে একটা স্টিলের টিফিন বক্স ছিল ওইটা দিয়ে লোকটাকে বাড়ি মারলাম। কতটা লেগেছিল জানি না, কিন্তু আমাকে ধরে রাখা হাতটার শক্তি কমে গেল। ধাক্কা দিলাম লোকটাকে, বাস থেকে লাফ দিলাম।

আমার ভাগ্য ভালো ছিল যে বাস আস্তে যাচ্ছিল আর মধুবনের সামনে জ‍্যাম ছিল। নেমে পেছনে দৌড় দিলাম। দূর থেকে আম্মুকে দেখতে পেলাম, আমাকেই খুঁজছে।জানতাম যে রাস্তায় একা বের হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আজকে জানলাম মায়ের সঙ্গেও বের হয়েও মেয়েরা নিরাপদ না।

কালকের খবরের কাগজে আমিও হয়তো একটা কলাম হয়ে যেতাম- আমার রক্ত-মাংসের শরীরটার জন্য, কিছু জানোয়ারের জন্য। যে দেশে একটা মেয়ে তার মায়ের সঙ্গেও সুরক্ষিত নয়, সেই দেশ আর যাই হোক স্বাধীন নয়।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে মানবধিকার কর্মী খুশী কবির বলেন, ‘যে মায়ের গর্ভে জন্ম, সেই মায়ের উপস্থিতিতেও যখন একজন মেয়ে নিপীড়ত হয়, কোনো জঘন্য ঘটনা ঘটতে যাওয়া থেকে বেঁচে যায় তখন আমি বলবো এই দেশ একজন নারীর জন্য উপর্যুক্ত না। এই দেশ নারীর নিরাপত্তা দিতে জানেনা। আর এই নিরাপত্তাহীণতার মাশুল নারী পুরুষ সবাইকেই দিতে হবে। কেননা নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। একজন পুরুষের সাথে মা-মেয়ে-বোন-স্ত্রী এই সম্পর্কে জড়িত থাকা মানুষগুলোও নারী। তাই এই নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা নারী পুরুষ নির্বীশেষে সবার।’

তিনি আরও বলেন, দেশকে অতিদ্রুত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। যৌন নিগ্রহের ঘটনায় শাস্তি হিসেবে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে