শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৪৭:৪৮

‘আমাদের কান্না কি কেউ শুনবে না?’

‘আমাদের কান্না কি কেউ শুনবে না?’

ঢাকা :‘তাদের অপেক্ষায় কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কেউ কি আমাদের কান্না শুনবে না? আমরা আর কাঁদতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি চাইলেই আমাদের স্বজনদের উদ্ধার সম্ভব।’ জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রেহেনা বানু মুন্নী। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর পল্লবীর বি-ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্নীর ভাই সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুকে। নিখোঁজ ভাইকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে চোখের পানি ফেলেছেন এই বোন। সংবাদ সম্মেলনে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে গুম হওয়া ১৯ জনের স্বজনরা একইভাবে আকুতি প্রকাশ করে। নিখোঁজ ১৯ জনই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি। উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নিখোঁজ নেতা পারভেজ হোসেনের ছয় বছরের মেয়ে হূদি হোসেনের কান্নায় নীরবতা নেমে আসে। ‘বাবার সাথে স্কুলে যাব। বাবা আইসক্রিম কিনে দিবে। মামনি কিনে দেয় না। মামনির টাকা নাই। বাবার সাথে শিশু পার্কে যাব। প্লিজ, আমার বাবাকে এনে দাও’—এমন সব কথা বলতে বলতে হূদি অঝোর ধারায় কান্না করে। এক আবেগঘন পরিবেশ নেমে আসে চারদিকে। বংশাল এলাকার নিখোঁজ বিএনপি নেতা সোহেলের ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী রাজু বলে, ২ ডিসেম্বর ছিল তার জন্মদিন। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর তার জন্মদিনে বাবা বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ফুল আনার জন্য। জন্মদিনের কেকও আনা হয়েছিল। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও বাবা আর ফিরে আসেনি। এরপর থেকে তার আর জন্মদিন পালন করা হয় না। নিজের জন্মদিনে যেন বাবার মৃত্যু দিন না হয়, সে জন্য ছেলেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বলে, ‘একবারের জন্য হলেও আপনি আমার বাবাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিন।’ বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল শাখার যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন জানান, ২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণখানের ১২৫, মোল্লারটেকের বাড়ির সামনে থেকে ডিবি পুলিশ মাইক্রোবাসে করে তাঁর ছেলে ও বন্ধু তরিকুল ইসলাম ঝন্টুকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। ‘র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি—সবার কাছে গিয়েছি। কেউ কিছু জানাতে পারেনি। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমার ছেলেকে যারা যে মাটিতে পুঁতে রেখেছে, সেটি বলে দিক...’ বাবা সামসুদ্দিন আর বলতে পারলেন না। সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান রানার বোন মিনারা বেগম বলেন, তাঁদের বাড়ি রংপুরে। তাঁরা ৫ ভাই-বোন। রানা ঢাকার উত্তর মুগদায় তাঁর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। মিনারা বলেন, ‘আমার ভাই ছাত্রদল করত—এটাই অপরাধ? প্রধানমন্ত্রী চাইলে ভাই ফিরে আসতে পারে। আমাদের বিশ্বাস সে ফিরে আসবে’—কেঁদে বলেন মিনারা বেগম। সবুজবাগ থানা ছাত্রদল শাখার সভাপতি মাহবুব হাসান সুজনের ছোট ভাই শাকিল বলেন, ‘সুজনের দুই সন্তান রয়েছে। তারা এখন বাবার অপেক্ষা করছে। বাবা কোথায় আছে—এ প্রশ্ন করলে আমরা কোনো উত্তর দিতে পারি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই বলে দেন, সুজন এখন কোথায় আছে।’ ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া বাংলাবাজার এলাকার ছাত্রদল নেতা খালিদ হাসান সোহেল ও সম্রাট মোল্লাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। খালিদের স্ত্রী সৈয়দা শাম্মী সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘খালিদের একটি ছেলে রয়েছে। প্রতিদিন বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু কিছুই বলতে পারি না। আমরা আর কত দিন এভাবে থাকব? প্রধানমন্ত্রী একজন মমতাময়ী মা। তিনি যদি একটু দৃষ্টি দেন তাহলে খালিদের ছেলে তার বাবাকে ফিরে পাবে।’ পল্লবী থেকে গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা বানু মুন্নী বলেন, তাঁর ভাইকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে তিনি চলতি বছরের ২৬ জুলাই সিএমএম কোর্টে একটি মামলা করেন। আদালত পল্লবী থানাকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই মামলার তদন্তের কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেন এই ১৯ জনকে নিজের সন্তান মনে করে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেন। তিনি নির্দেশ দিলেই এই ১৯ জনের ফিরে আসা সম্ভব।’ -কালেরকণ্ঠ ০৫ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে